রংপুর: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) জাতীয় পতাকা বিকৃত ও অবমাননাকারী শিক্ষক ও উপাচার্যকে শাস্তি দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটি।
রোববার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কার করার দাবিতে এ আল্টিমেটাম দেওয়া হয় বলে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আল মামুন।
বিষয়টি নিয়ে এক প্রতিবাদলিপিতেও এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন স্বাক্ষরিত এ প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, গত ১৬ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজয় দিবসের আয়োজনে কিছু শিক্ষক লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত জাতীয় পতাকার আকৃতি বিকৃত করে ছবি তোলেন। সবুজের মধ্যে লাল বৃত্তের পরিবর্তে চার কোনা আকৃতি দেওয়া হয়। যা প্রচলিত আইন, ইতিহাস ও সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ বিষয়ে সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন পর্যন্ত কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়নি। এর আগেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কার্যক্রম সংগঠিত হয়। কিন্তু তখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে বারবার এমন হীন কাজে লীপ্ত হচ্ছেন তারা।
এতে আরও বলা হয়, জাতীয় পতাকা অবমাননা করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সুস্পষ্টভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ করেছেন। জাতীয় পতাকা অবমাননা বাংলাদেশকে অবমাননার সামিল। এমন সংবিধান পরিপন্থী কর্মকাণ্ড করার পরেও উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ নিরব ভূমিকা পালন করে প্রমাণ করছেন যে তিনি জাতীয় পতাকা অবমাননাকারীদের প্রশ্রয় দিয়ে তাদের রক্ষা করার চেষ্টা করে আইন লঙ্ঘন করেছেন। তাই উপাচার্যও কোনোভাবে এ দায় এড়াতে পারেন না। তাই আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, দ্রুত পতাকা বিকৃত ও অবমাননাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার ও গ্রেফতার করে শাস্তি দিতে হবে। এছাড়াও নীরব ভূমিকা পালনের অপরাধে উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কঠোর কর্মসূচি পালন করবে।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বাংলানিউজকে বলেন, জাতীয় পতাকা বিকৃত করার মত ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও উপাচার্য কোনো তদন্ত কমিটি বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। তাই আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি। এর মধ্যে উপাচার্যসহ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবো।
বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবসে সবুজের মধ্যে লাল বৃত্তের পরিবর্তে চারকোণা লাল আকৃতির ‘পতাকা’ হাতে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কয়েকটি ছবি নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। ছবিতে দেখা যায়, জাতীয় পতাকার নকশা পরিবর্তন করে সবুজের ভেতর লাল বৃত্তের পরিবর্তে চারকোণা আকৃতির লাল ‘পতাকা’ হাতে নিয়ে স্বাধীনতা স্মারক চত্বরে পোজ দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ তুলে পোস্ট দেওয়া হলে তা ভাইরাল হয়।
ছবিতে দেখা যায়- বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান, বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. পরিমল চন্দ্র বর্মন, অর্থ ও হিসাব দফতরের পরিচালক, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শামীম হোসাইন, ইতিহাসের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক সোহাগ আলী, মার্কেটিং বিভাগের সহকারি অধ্যাপক, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মাসুদুল হাসান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক রাম প্রসাদ, সহকারী অধ্যাপক কাইয়ুম এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রহমতউল্লাহ একটি বিকৃত পতাকা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২০
এসআই