ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে ‘ঢাবিয়ান’ বলে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। শুধু ঢাবিই নয়, দেশের নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা বিশেষ ট্যাগ ব্যবহার করেন।
ওপরের কথাগুলো বেশ ভাবিয়েছে পলাশ হোসেনকে। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট খেলোয়াড়দের স্পোর্টস এজেন্ট পলাশ সকাল নামে পরিচিত। তার এ ভাবনা নিয়ে দেশ সেরা শিক্ষকদের কাছে গিয়েছেন তিনি। অনেকের সঙ্গে কথা বলার একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। গড়েছেন ‘হাউজ অফ এনইউবিডিয়ানস’।
পলাশের এ ব্যতিক্রম প্রতিষ্ঠানের প্রথম উদ্দেশ্যই হলো- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীদের কাছে ‘এনইউবিডিয়ানস’ নামটি ছড়িয়ে দেয়া। প্রতিষ্ঠানটি এমন একটি প্লাটফর্ম, যেটি কাজ করছে সম্পূর্ণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীদের ঘিরে। পলাশের ভাষায়, ‘চাকরি কিংবা যেকোনো জায়গায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নামটা শুনলে অনেকে অবহেলা করে। কোনো পড়ালেখা কিন্তু অবহেলার নয়। মূলত তাদের আত্নউন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করতেই আমাদের পথচলা। ’
ভাবনা যখন আশেপাশের গল্প থেকেই
পলাশের ভাই আকরাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন। পাবলিকে সুযোগ না পাওয়ায় মানুষের ধীক্কারধর্মী কথাবার্তা অনেক শুনতে হয়েছে তাকে। শুধু নিজের ভাই-ই নয়, আছে এরকমই হাজারো শিক্ষার্থীর গল্প বারবার মনে নাড়া দিচ্ছিলো পলাশকে। তাই তিনি এমন প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করালেন, যেটি কাজ করবে শুধুমাত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঘিরেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র সহযোগী অধ্যাপক খালেদ মাহমুদ ‘এনইউবিডিয়ানস’ নামটি দিয়েছেন। তার মতে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে কাজ করার মতো তেমন কোনো প্ল্যাটফর্মই ছিল না। কিন্তু নতুন এ উদ্যোগের কারণে সবাই বিভিন্ন দক্ষতা শিখতে পারবে, চাকরির বাজার সম্পর্কে জানতে পারবে।
শুধু পড়ালেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা এই প্লাটফর্মে পাঠ্যবই অনুসারে ক্লাসের সুযোগ রয়েছে। এসব ক্লাস নিচ্ছেন দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষকরা। প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে পড়ালেখার পাশাপাশি নানান সহশিক্ষা নিয়েও। সাপ্তাহিক কুইজ, টেস্টসহ নানান কার্যক্রমসহ প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে শিক্ষার্থীদের দক্ষতার উপর প্রশিক্ষণ নিয়েও।
প্রধান প্রশাসনিক কার্যনির্বাহী জুয়েল বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বা কর্পোরেটের সফল মানুষদের নিয়ে আমরা কটেন্ট নিয়ে কাজ করছি। মূলত ব্যবসায়, মার্কেটিং, ব্যবসায় উদ্যোগ কিংবা উচ্চতর শিক্ষাসহ নানান সহশিক্ষামূলক ভিডিও নিয়ে কাজ করছি আমরা।
অর্জন যেনো হাসিমুখেই
কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে পুরো প্রতিষ্ঠান? জানতে ঢুঁ মেরেছিলাম প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে। যেখানে কাজ করছিলেন অর্ধশত তরুণ। কেউ কাজ করছে ক্লাস রেডি করার কার্যক্রমে, অন্যদিকে চলছে প্রোডাকশন টিমের কটেন্ট তৈরির শুটিং। ব্যস্ততার ছাপ যেনো সবখানেই। তবে অবাক করা ব্যাপারটা হচ্ছে ২/৩ জন ছাড়া অন্যান্য সবাই-ই কাজ করছে পুরোপুরি স্বেচ্ছায়, বিনা পারিশ্রমিকে। অতিরিক্ত প্রধান প্রশাসনিক কার্যনির্বাহী তানভীর হোসাইনের ভাষায় পারিশ্রমিক থেকেও যেন মূখ্য এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে উপকৃত তরুণদের হাসিমুখের চিত্রটা।
বর্তমানে মাত্র অল্প সময়ের ব্যবধানেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে বিশাল একটি পরিবারে রূপ নিচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান। নিজেদের ভবিষ্যতে কোন পথে দেখতে চান? জবাবে পলাশ বলেন, আমরা চাই দেশজুড়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান, প্রাক্তন সব ছাত্র যেন নিজেদের গর্বের সঙ্গে পরিচয় দিতে পারে। এছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সব ক্ষেত্রের তফাৎ আরো কমিয়ে আনা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২১
এনটি