বরিশাল: ভূত নাকি জ্বীন, এ প্রশ্নের সমাধান না হলেও অজানা সেই আতঙ্কের জেরে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বরিশাল নগরের রূপাতলীর বেসরকারি সেই জমজম নার্সিং কলেজ।
শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিভিন্ন ঘটনার পর শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সাত দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় নার্সিং কলেজটি।
এদিকে জমজম নার্সিং কলেজের চেয়ারম্যান মাসুদুল হক মাদরাসা ছাত্রীদের শরীরে আঁচড় কীভাবে এলো এর যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। তিনি বলেছেন, এলার্জি থেকেও এ সমস্যা হয়ে থাকতে পারে, তাছাড়া মাদরাসার অসুস্থ ছাত্রীরা ঠিকমত খাওয়া দাওয়া না করায় মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত হতে পারেন।
তিনি জানান, নার্সিং কলেজের একাডেমিক ভবনের ষষ্ঠ তলায় খিদমাতুল মাদীনা হিফজুল কোরআন নামে একটি মাদরাসা ছিল। সেখানে ১৩০ জনের মতো ছোট শিশু-কিশোররা থাকতো। ভবনটির চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় ছিল আমাদের মাদরাসার ছাত্রী হোস্টেল। পরে মাদরাসাটি ভবন থেকে চলে গেলে পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় ছাত্রী হোস্টেল করা হয়।
মাদরাসা শিক্ষার্থীদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, শুক্রবার সন্ধ্যার আগে হোস্টেলের পঞ্চম তলার একটি কক্ষে মিথিলা নামে ম্যাটস অনুষদের এক ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই ছাত্রীর হাতে আঁচড় দেখা গেছে। ওই ছাত্রী জানিয়েছিল বাথরুম থেকে বের হওয়ার পর তিনি হাতে আঁচড় দেখতে পান। পরে তার হাতে জ্বালা পোড়া শুরু হয়। এরপর হুজুর এসে তাকে পানি ও তেল পরা দেন। তবে এর আগে মাদরাসা ছাত্রীরা প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের শব্দ শুনতে পেতেন বলে দাবি করেন ওই মাদ্রাসাছাত্রী। আর তাই গত বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ছাত্রীদের শান্তনার দেওয়ার জন্য ছাত্রী হোস্টেলে মিলাদ মাহফিল করা হয়েছে।
এদিকে নার্সিং কলেজের চেয়ারম্যান মাসুদুল আরও জানান, শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতের ঘটনার পর সারারাত সেখানে তিনি থাকলেও কিছুই শুনতে পাননি। এরপরই হোস্টেল ও কলেজ সাত দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
তিনি জানান, আমরা ছাত্রীদের চিকিৎসা দিয়েছি, তারা বাড়ি চলে গেছেন।
মাদরাসার হোস্টেলে জামিলা নামে যে ছাত্রী অসুস্থ হয়েছিল তিনি পরীক্ষার হলসহ বিভিন্ন সময় এর আগেও একাধিকবার অসুস্থ হয়ে পড়ে ছিলেন বলেও কলেজ সূত্রে জানা গেছে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া এক মাদরাসাছাত্রী জানান, প্রথমে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শিমু নামে এক ছাত্রীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে মার্চ মাসে আমরা হোস্টেল থেকে চলে যাই। এছাড়া একাধিক বার আমরা হোস্টেলের ছাদে বিভিন্ন শব্দ শুনতে পেয়েছি।
ছাত্রী হোস্টেলের সুপার শাওনা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, শুক্রবার সকালে আমি মাদরাসাছাত্রী মিথিলার কক্ষেই ছিলাম। তিনি বাথরুম থেকে বের হওয়ার পর হঠাৎ তার হাতে জ্বালা পোড়া হলে আঁচড় দেখতে পায়। আমি নিজেও তার হাতের আঁচড় দেখেছি। তাছাড়া আমি নিজেও হোস্টেলে বিভিন্ন ধরনের শব্দ শুনেছি। বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছিল।
তবে পূর্বে এ ভবনে থাকা খিদমাতুল মাদীনা হিফজুল কোরআন মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হাফেজ মাওলানা মুহা. মুনিরুজ্জামান জানান, আমরা যখন ওখানে ছিলাম তখন কোনো সমস্যা ছিল না।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. রাসেল বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, কলেজ থেকে অভিযোগ দেওয়া হলে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২১
এমএস/আরআইএস