বরিশাল: রাতের আঁধারে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।

এক যুক্ত বিবৃতিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বরিশাল জেলার আহ্বায়ক সাগর দাস আকাশ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট মহানগর শাখার আহ্বায়ক প্রতিভা রায় ববির শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

নেতারা বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তুচ্ছ কথা কাটাকাটির ঘটনাকে কেন্দ্র করে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডের প্রভাবশালী মহল পরিকল্পিতভাবে ছাত্রদের বাসায় বাসায় গিয়ে তাদের ওপর এ ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে। বর্তমানে প্রায় ১৫ জন ছাত্র বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। একটি স্বাধীন দেশে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর এহেন সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা জাতির জন্য লজ্জার। নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসনকে অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান এবং আন্দোলনরত ছাত্রদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন।

অপর এক যুক্ত বিবৃতিতে বাসদ বরিশাল জেলার আহ্বায়ক ইমরান হাবিব রুমন ও সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

এছাড়া বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন বরিশাল জেলা কমিটির আহ্বায়ক নবীন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক সাকিবুল ইসলাম সাফিন এক যৌথ বিবৃতিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।  

নেতারা বলেন, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিআরটিসি বাস কন্টাক্টর বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করেন ও অপরজনকে লাঞ্চিত করেন। এ ঘটনার রেশ ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করেন এবং ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়ে সবাই নিজ বাসস্থান ফিরে যান।  

তারা বলেন, শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শেষে বাসস্থানে ফিরে গেলে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সব শিক্ষার্থীদের মেসে সংগঠিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী নিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা অতর্কিত হামলা চালায়।  

নেতারা বলেন, রাতে বরিশাল নগরের রূপাতলী হাউজিং এলাকার সব মোড়ে মোড়ে সন্ত্রাসী বাহিনী টহল দিতে থাকেন। যার ফলে আহতদের তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াও সম্ভব হয়নি এবং আহতদের উদ্ধার করাও সম্ভব হয়নি। রাতে ভিসি ও প্রক্টরের সঙ্গে একাধিকবার শিক্ষার্থীরা যোগাযোগ করতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছে। হামলা চলাকালীন পুলিশ নিরব দর্শকের ভুমিকায় অবতীর্ণ ছিল। পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ নির্লিপ্ততা সন্ত্রাসীদের পরোক্ষ মদদের সামিল। দ্রুত এ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে হবে। সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিতে ব্যর্থ হলে ছাত্র ফেডারেশনসহ অপরাপর সব শিক্ষার্থীবান্ধব ছাত্র সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে তারা হুঁশিয়ার দেন।  

এদিকে মধ্য রাতে ববি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী উগ্র সন্ত্রাসীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন ইশা ছাত্র আন্দোলন বরিশাল মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতারা।

গত মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী তৌফিকুল সজল ও ফারজানা আক্তার মেমি নিজ বাড়ি খুলনায় যাওয়ার জন্য রুপাতলীস্থ বিআরটিসি কাউন্টারে যান। সেখানে কাউন্টার স্টাফ রফিক তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে সজলকে মারধর ও মেমিকে লাঞ্চিত করেন। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে এবং রফিককে গ্রেফতারের দাবি জানান। পুলিশ এক ঘণ্টার মধ্যে রফিককে গ্রেফতার করলে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ তুলে নেন। পরে মঙ্গলবার দিনগত গভীর রাতে রূপাতলী এলাকায় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মেসে গিয়ে হামলা চালায় দৃর্বৃত্তরা। এতে ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হলে ১১ জনকে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে রাতের এ হামলার ঘটনার প্রতিবাদে গত বুধবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে দুই দফার বৈঠক শেষে ১০ ঘণ্টা পরে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধে কর্মসূচি স্থগিত করে বুধবার বিকেল ৫টায়।

বাংলাদেশ সময়: ১১১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২১
এমএস/আরবি