ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

শেষ কর্মদিবসেও ক্যাম্পাসে ছিলেন না কলিমউল্লাহ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৯ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২১
শেষ কর্মদিবসেও ক্যাম্পাসে ছিলেন না কলিমউল্লাহ

রংপুর: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সদ্য সাবেক উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ শেষ কর্মদিবসেও ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ছিলেন।  

রোববার (১৩ জুন) তার মেয়াদ চার বছর পূর্ণ হলেও তার আগে থেকেই ঢাকায় বসে অফিস করছিলেন তিনি।

তবে জনসংযোগ দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিয়েছেন তিনি।

বিতর্কিত এ উপাচার্য সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (১০ জুন) রাত সাড়ে ৩টায় অনলাইনে ক্লাস নিয়ে বিতর্কের জন্ম দেন।  

প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা কাজ করার দাবি, দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকা, একাই ২৬টি কোর্সের দায়িত্ব নেওয়া, হিন্দি গানে ড্যান্স, অনিয়ম দুর্নীতির প্রমাণ ও সর্বশেষ শিক্ষামন্ত্রীকে নিয়ে উদ্ভট মন্তব্য করে বিতর্কের জন্ম দেন তিনি। কিন্তু তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ ক্যাম্পাসে না থেকে ঢাকায় বসে লিঁয়াজো অফিসের নামে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন কার্যক্রম চালাতেন তিনি। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশসহ ক্যাম্পাসে আন্দোলন হলেও তিনি তাতে কর্ণপাত না করে লিঁয়াজো অফিসে কার্যক্রম চালাতেন।  

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ,  ঢাকাস্থ নিয়াজো অফিসের নামে হাওয়া ভবন খুলে নিয়োগ বাণিজ্য করতেন তিনি। সিন্ডিকেট মিটিং ক্যাম্পাসে না করে লাখ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও ফাউন্ডেশন ট্রেইনিং এর নামে নিয়োগকৃত শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছ থেকেও ব্যবসা করতেন। তার পছন্দের দোকান থেকে দামি ফরমাল পোশাক কেনা, তার লিখিত বই উচ্চ মূল্যে কেনা, এমন কি পছন্দের সেলুন থেকে নির্দিষ্ট মাপে উচ্চ মূল্যে চুল কাটাতে হতো ফাউন্ডেশন ট্রেইনিং এ অংশগ্রহনকারীদের। যা সবার জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদসহ অধিকার সুরক্ষা পরিষদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন। যার তদন্ত করছে ইউজিসির একটি টিম।

এদিকে, উপাচার্যকে ক্যাম্পাসে না পেয়ে একপর্যায়ে অধিকার সুরক্ষা পরিষদ ক্যাম্পাসে হাজিরা খাতা স্থাপন করেছিল। সর্বশেষ পহেলা জুনেও ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের ভেতরে পুনরায় হাজিরা খাতা স্থাপন করা হয়। সেখানে উপাচার্যের হাজিরা নিয়ে মূল্যায়নে বলা হয়েছিল, ‘ডিসকোয়ালিফায়েড’ এবং সুপারিশ করা ছিল ‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি’।  

এ হাজিরা খাতায় ৩১ মে পর্যন্ত কলিমউল্লাহ ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ২৪০ দিন। তার মোট কার্যকাল ১ হাজার ৪৬০ দিনের মধ্যে তার অনুপস্থিতি ১ হাজার ২২০ দিন। আজ তার মেয়াদের শেষ কর্মদিবসেও তিনি ক্যাম্পাসে আসেননি। ধারণা করা হচ্ছিলো, ক্যাম্পাসে এলে তাকে অবরুদ্ধ করা থেকে পারে।

তবে শেষ দিবসে বিশ্ববিদ্যালয় জনসংযোগ দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি সবার সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।  

এতে উল্লেখ করা হয়, শেষ কর্মদিবসে তাকে বিভিন্ন মাধ্যমে ও সাক্ষাতে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিভিন্ন দপ্তরের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। তবে বাস্তবে তেমন কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি।

অন্যদিকে, বিতর্কিত এ উপাচার্যের শেষ দিনে ক্যাম্পাসে মিষ্টি বিতরণ করেছে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। রাত ৮টার দিকে ক্যাম্পাসের ভেতরে মিষ্টি বিতরণ, কুশপুতুল উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা, গণক্রন্দন করে শোক প্রকাশ, আগরবাতি জালিয়ে স্তব্ধ থাকাসহ আতশবাজি ফুটিয়ে আনন্দ প্রকাশ কর্মসূচি পালন করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক ড. মতিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, যোগদানের পর থেকেই নানা রকমের বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তিনি। শেষ দিনেও তিনি এলেন না। সমস্ত আইন-কানুন, প্রথাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিনি নিজের মত করে বিদায় নিলেন। দায়িত্ব হস্তান্তর পর্যন্ত করলেন না। এটি তার অনিয়মেরই অংশ।

শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. তুহিন ওয়াদুদ বাংলানিউজকে বলেন, যে উপাচার্য ক্যাম্পাসের ভবন, বিভাগ ও  দপ্তর চেনেন না, তাকে শেষ দিন পর্যন্ত দায়িত্বে রাখাটাই লজ্জাকর। তার অনিয়ম দুর্নীতির প্রমাণ ইউজিসি পেয়েছে। এখন তাকে বিচারের আওতায় এনে সরকার যে অনিয়মের বিরুদ্ধে সব সময় অবস্থান করে, তা আরও সুস্পষ্ট করতে হবে।

এ বিষয়ে নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৪ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২১
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।