ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

স্কুলের ফটক থেকে প্রতিষ্ঠাতাদের নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২১
স্কুলের ফটক থেকে প্রতিষ্ঠাতাদের নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ

পাবনা: পাবনার সাঁথিয়ায় ২ নম্বর রুপসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে স্কুল প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।  

সাঁথিয়া উপজেলার ধুলাউড়ী ইউনিয়নের বাউসগাড়ী গ্রামের অর্ধশত বছরের পুরাতন ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এলাকায় কোমলমতি শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।

১৯৬৪ সালে স্থানীয় আব্দুর রহমান খান, মো. ওয়াজ উদ্দিন খান, মো. দেবরাজ উদ্দিন খান ও মো. ওফাজ মোল্লা নামে চার ব্যক্তি ৩৩ শতাংশ জায়গা দান করে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। একই বংশের চার ভাই ও এক জামাতার উদ্যোগে তখন নির্মাণ করা হয় এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেই সময়ে বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে আজ আধুনিকতার ছোঁয়ায় সরকারি অর্থায়নে দু’টি পাকা ভবন নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু মুছে ফেলা হয়েছে স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতাদের নাম। ইতিহাস বিকৃতি আর আঞ্চলিক রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এমনটা হয়েছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।  

তবে নাম বাদ দিয়ে নতুন প্রধান ফটক নির্মাণ করায় কোনো অন্যায় বা অনিয়ম হয়নি বলে মনে করছেন বর্তমানে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক জোসনা রানী কর্মকার।  

তিনি বলেন, আগের স্কুল কমিটির সভাপতি একটি ফটক তৈরি করার সময় মূল ফটকে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য একজনের নাম দিয়েছিলেন। কিন্তু স্কুলে নতুন ভবন নির্মাণ করার পরে প্রধান ফটক ভেঙে নতুন করে ফটক নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে ভবন নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শুধু স্কুলের নাম দিয়েছে। এখানে তাদের নাম থাকবে কি থাকবে না সে ব্যাপারে শিক্ষা অফিস থেকে আমাদের কোনো নির্দেশনা দেয়নি। আর কোনো স্কুলে প্রতিষ্ঠাতাদের নাম কখনো প্রধান ফটকে থাকে না। শুধু স্কুলের নামই থাকে। এখানে কোনো অনিয়ম বা অন্যায় করা হয়নি।  

এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য প্রয়াত আব্দুর রহমান খানের সন্তান স্কুল কমিটির সাবেক সভাপতি আব্দুর রশিদ খান বলেন, আমি তিন বার এ স্কুলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। এ স্কুলের সব প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতার পক্ষের সমর্থক ছিলেন। তবে সরাসরি যুদ্ধ করেননি তারা। আমি এ স্কুলের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরে নিজের অর্থায়নে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাদের নাম দিয়ে একটি ফটক নির্মাণ করেছিলাম। নতুন ভবন নির্মাণের সময় সেই ফটকটি নকশায় বেধে যায়। এ কারণে সেটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে নতুন ফটক নির্মাণের সময় আমি স্কুল ভবন নির্মাণের প্রকৌশলীকে বলেছিলাম, নাম দেওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি বলে ছিলেন নির্দেশনা নেই। তবে স্কুলের উত্তর পাশে ফাঁকা জায়গা আছে, সেখানে আরো একটি ফটক নির্মাণ করা যাবে। যদি সুযোগ হয় কখনো, প্রতিষ্ঠাতাদের নাম দিয়ে একটি ফটক নির্মাণ করতে চাই আমরা। তবে আমি মনে করি, সব স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাদের নাম প্রধান ফটকে থাকা উচিত। এটি ইতিহাসের অংশ। ইতিহাস সংরক্ষণ করার দায়িত্ব আমাদের সবার।

স্কুল কমিটির বর্তমান সভাপতি মো. ইমদাদুল হক বলেন, নতুন দায়িত্ব নেওয়ার পরে এখনো বিষটি নিয়ে শিক্ষক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা হয়নি। তবে এটা অবশ্যই হওয়া দরকার। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাদের অবদানে হয়েছে, তাদের চারজনের নাম দিয়ে একটি ফলক নির্মাণ করার ইচ্ছা আমার আছে। এ স্কুলের সাবেক সভাপতি শুধু তার বাবার নাম দিয়ে ফটক করেছিলেন। কিন্তু শুধু একজনের নাম দিলে হবে না। আমরা চাই, প্রতিষ্ঠাতা চারজনের নাম দিয়েই ফলক বা ফটক নির্মাণ করতে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা (ইউএনও) স্যারের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করা হবে। তবে এর মধ্যে কোনো ষড়যন্ত্র বা হিংসার কোনো বিষয় নেই। আমরা এ স্কুলের উন্নয়নের জন্য গ্রামের সবাই একসঙ্গে হয়ে কাজ করছি।
তবে স্থানীয়দের দাবি, এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের নাম মূল ফটকে দেওয়া হোক। শুধু এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নয়, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এ নিয়ম হওয়া উচিত। নতুবা কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যাবে সব স্মৃতি আর বিকৃত হবে ইতিহাস।  

১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯৭৩ সালে সরকারিকরণ হয়। বর্তমানে দু’টি পাকা ভবন ও ১১টি শ্রেণি কক্ষ রয়েছে। শিক্ষক রয়েছেন ১১ জন। মোট শিক্ষার্থী ৫৬৯ জন। তিন গ্রামের শিক্ষার্থীরা এ স্কুলে পড়ে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২১
এসআই

    

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।