ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

 ইবির নাম বিড়ম্বনা, শিক্ষার্থীর সনদেই নামে ভিন্নতা!

তারিকুল ইসলাম, ইবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০২১
 ইবির নাম বিড়ম্বনা, শিক্ষার্থীর সনদেই নামে ভিন্নতা!

ইবি: চাইলেই পরিবর্তন করা যাচ্ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) নাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্ট লঙ্ঘন করে যত্রতত্র ব্যবহার হচ্ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিন্ন নাম।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত চলছে বিভিন্ন বিভাগ, দপ্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহারের ভিন্নতা। এমনকি অনার্স-মাস্টার্সের সনদ, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, নম্বরপত্রেও লক্ষ্য করা গেছে এই ভিন্নতা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৪২ বছর পেরিয়ে গেলেও দূর হয়নি এ সমস্যা।  

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৮০ সূত্রমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী নাম হবে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়’। বিশ্ববিদ্যালয় আইন এর তিন নম্বর ধারার এক নম্বর উপধারায় উল্লেখ রয়েছে ‘এই আইনের বিধান অনুযায়ী একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হইবে, যাহা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় নামে অভিহিত হইবে। ’ 

‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়’ নামটি এখন বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ৩ নম্বর ধারার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। ব্যবহারের দিক থেকে নিজেদের ইচ্ছামাফিকই চলছে। বিভাগ, দপ্তরগুলো যেভাবে পারছে নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ীই ভিন্ন ভিন্ন নাম ব্যবহার করে যাচ্ছে। মূল নামটির ব্যবহার একদমই নগন্য। মূল নামের পরিবর্তে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া’ ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ’ ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ-বাংলাদেশ’ ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ’ লেখা হচ্ছে।

নামের ভিন্ন ব্যবহারে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের মধ্যে সবার আগে উঠে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের নাম। গত ২ জুলাই দপ্তর থেকে টিকা সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল নামের ব্যবহার। এর পরিবর্তে যে নাম ব্যবহার করা হয়েছে সেখানেও আবার ভিন্নতা। বিজ্ঞপ্তিটির উপরের দিকে ব্যবহার করা হয়েছে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ, কুষ্টিয়া-৭০০৩’। অপরদিকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরের নিচে ব্যবহার করা হয়েছে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া’। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে ভিন্ন নাম ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত-ই প্রজ্ঞাপন/বিজ্ঞপ্তি পাঠাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত এ দপ্তরটি।

ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনটির পিডিএফ ফাইলে রয়েছে রেজিস্ট্রারের সত্যয়নকৃত স্বাক্ষর। অথচ সেই দপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে ভিন্ন নাম ব্যবহার করে আসাটা আশাব্যঞ্জক নয় বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেও দেখা মেলে ভিন্ন নামের ব্যবহার। ওয়েবসাইটে মূল নাম ব্যবহার না করে লেখা হয়েছে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যলয়, বাংলাদেশ’।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর ‘তথ্য প্রকাশনা ও জনসংযোগ’। সাধারণত বিশ্ববিদ্যলয়ের পরিচিতি সঠিকভাবে তুলে ধরার কাজটি করে থাকে দপ্তরটি। কিন্তু এ দপ্তরটিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিন্ন নাম ব্যবহার করে আসছে। গত ৩১ জুলাই পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে, দাপ্তরিক প্যাডের উপরে মূল নাম থাকলেও দ্বিতীয় লাইনে এবং নিচের দিকে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া’ লেখা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই ভিন্ন নাম ব্যবহার করা এসব সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের। এমনকি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেও ই-মেইল করা হয় এসব সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।  

বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বিকৃতির অন্যতম কারণ হিসেবে অনেকে এটিকে চিহ্নিত করেছেন। জনসংযোগ থেকে প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্যালেন্ডার, ডায়েরিতেও মেলে নামের ভিন্নতার দেখা।

নামের ইচ্ছামাফিক ব্যবহারের তালিকা থেকে বাদ যায়নি শিক্ষার্থীদের অনার্স এবং মাস্টার্সের সাময়িক সনদ, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, নম্বরপত্র, ফল প্রকাশের সনদেও। সাময়িক সনদে দুই জায়গায় মূল নাম লিখলেও এক জায়গায় ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ’ ব্যবহার করা হয়েছে। তাছাড়া সেখানে যে সিল ব্যবহার করা হয়েছে সেই সিলে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া’ ব্যবহার করতে দেখা যায়। আর একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টে তো বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল নামের ব্যবহার একদম ই নেই। মূল নামের পরিবর্তে এক জায়গায় ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ’ আরেক জায়গায় ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া-বাংলাদেশ’ ব্যবহার করা হয়েছে। নম্বরপত্র, ফল প্রকাশের সনদেও একই দশা।

প্রয়োজনীয় কাগজে নামের ভিন্নতা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করতে যাওয়া শিক্ষার্থীরা। চাকরির পরীক্ষায় এসব সনদসহ অন্যান্য কাগজে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের ভিন্নতা থাকায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।  
  
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সাজ্জাদ হোসেন নামে সাবেক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত সমাবর্তন না হওয়ার কারণে চাকরির ভাইভাতে এমনিতেই আমাদের সাময়িক সনদে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এর মধ্যে এক কাগজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নাম থাকায় আরো বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো পর্যন্ত বিষয়টি সমাধান না করাটা সত্যিই হতাশাজনক। ’  

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজে, বাসে, জাতীয় দিবসের নিজ নিজ বিভাগীয় ব্যানারে, সভা-সেমিনারে, বিভাগের নোটিশে ও দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে মূল নামের পরিবর্তে নিজেদের মনগড়া নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আসল নামটাই ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি, অচিরেই যেনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়’ নামটি আমাদের জন্য অনেক মর্যাদার। কারণ এ নামে বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় একটাই। আমাদের সবারই উচিত এ নামটা ব্যবহার করা। তবে অবস্থানগত কারণে নামের পাশে একটা জেলা ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ভিন্ন ভিন্ন নাম ব্যবহার করা কোনোভাবে কাম্য নয়। দপ্তর, বিভাগগুলোকে খুব শিগগিরই আমরা একটা প্রজ্ঞাপন পাঠাবো বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সঠিক ব্যবহার করার জন্য। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।