খুলনা: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সদ্য প্রয়াত শিক্ষক ড. মো. সেলিম হোসেনের মরদেহ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের আবেদন করেছে পুলিশ।
রোববার (৫ নভেম্বর) রাতে বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রবীর কুমার বিশ্বাস।
তিনি বলেন, কুয়েট কর্তৃপক্ষ শিক্ষক ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুকে অস্বাভাবিক হিসেবে চিহ্নিত করায় বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ায় মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য বিষয়টি জিডিভুক্ত করা হয়েছে। এই জিডির প্রেক্ষিতে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শাহরিয়ার হাসানকে তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) করা হয়। যেহেতু সেলিম হোসেনের মরদেহ দাফন হয়ে গেছে, সেহেতু মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের একটি মাত্র উপায় তা উত্তোলন করে ময়না তদন্ত করা। এ জন্য তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ময়নাতদন্তের আবেদন করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। যে কারণে আদালত মরদেহ কবর থেকে তোলার অনুমতি দেননি। আদালত থেকে জানানো হয়, বিষয়টি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের এখতিয়ার। এ জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর খুলনা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করা হয়েছে। মরদেহ যেহেতু কুষ্টিয়াতে দাফন করা হয়েছে, সে কারণে খুলনার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবেদনটি কুষ্টিয়ার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠাবেন।
এদিকে রোববার কুয়েট শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ক্লাবে সেলিম হোসেনের শোকসভার আয়োজন করা হয়। সভায় বক্তারা বলেন, অধ্যাপক সেলিমের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার না করা পর্যন্ত ক্লাসে ফিরবেন না তারা। অধ্যাপক সেলিমের স্ত্রী সাবিনা খাতুন শোকসভায় ভিডিও কলের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে কথা বলেন।
এ সময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার স্বামী কোনো রাজনীতি করতেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের বাইরেও কোথাও যেতেন না। সে কেমন মানুষ ছিল তা আপনারাই ভালো জানেন। এখন আমি একমাত্র সাড়ে ৬ বছরের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস অনিকাকে নিয়ে কোথায় যাব? অধ্যাপক সেলিমের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের নামে মামলা করার জন্য কুয়েট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন তিনি।
বর্তমানে তাকেও বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) বেলা ৩টায় মারা যান কুয়েট শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেন (৩৮)। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের লালনশাহ হলের ডিসেম্বর মাসের খাদ্য-ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) পদে নিজের লোককে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ড. সেলিমকে চাপ দেন কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান। ঘটনার দিন দাপ্তরিক কক্ষে সাদমান নাহিয়ান ও তার অনুগতদের অশালীন আচরণ ও মানসিক নির্যাতনেরও শিকার হন ড. সেলিম।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সাদমান নাহিয়ান ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা প্রায় আধঘণ্টা ওই শিক্ষকের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। পরে শিক্ষক ড. সেলিম হোসেন দুপুরে খাবারের জন্য বাসায় যান। দুপুর ২টার দিকে স্ত্রী লক্ষ্য করেন তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। পরে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বে কিছু সাধারণ ছাত্রের নামে জেরা, অপমান, অবরুদ্ধ করে রাখা ও মানসিক নির্যাতনে ড. সেলিমের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় দুই দফা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কুয়েট প্রশাসন। আর
দোষীদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারসহ ৫ দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করে শিক্ষক সমিতি। পাশপাশি প্রতিবাদ সমাবেশ করে কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান শিক্ষকরা।
এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধসহ বিকেল ৪টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার পর ৭টি আবাসিক হলে থাকা প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী হল ছাড়েন।
আর ড. সেলিম হোসেনের 'অস্বাভাবিক' মৃত্যুর ঘটনায় শনিবার (৪ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ ৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫ , ২০২১
এমআরএম/এমএমজেড