ফেনী: ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মুন্সি খুরশিদ আলম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি হঠাৎ স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিক পক্ষ। আর্থিক সমস্যার কারণ দেখিয়ে বন্ধ ঘোষণা করা এ স্কুলে পড়ুয়া ১৬৪ জন শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষা জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।
জানা যায়, নারীদের শিক্ষায় এগিয়ে নিতে ২০১৫ সালে সোনাগাজীর পূর্ব তুলাতলী এলাকায় মুন্সি খুরশিদ আলম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। ব্যারিস্টার নুরুল হক দম্পতির সম্পত্তির ওপর এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন অধ্যাপিকা আনোয়ারা বেগম হক।
শুরু থেকেই কিশোরীদের স্কুলমুখী করতে এ বিদ্যালয়ে সব ছাত্রীকে সম্পূর্ণ বিনা বেতনে অধ্যায়নের সুযোগ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের যাবতীয় উপকরণ ও পোশাক এবং শিক্ষকদের বেতনসহ সব ধরনের ব্যয় বহন করতেন প্রতিষ্ঠাতা। সুযোগ-সুবিধা ভালো ও পড়ালেখায় সুনাম থাকায় আশপাশের এলাকার অভিভাবকদের প্রথম পছন্দ ছিল এ স্কুলটি।
যার কারণে প্রতিবছরই এ স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। শনিবার (৪ ডিসেম্বর) অভিভাবকদের স্কুলে ঢেকে বিদ্যালয়টি স্থায়ীভাবে বন্ধের ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। এ সময় প্রতিষ্ঠাতা নুরুল হক অসুস্থ থাকা ও তার পক্ষে ব্যয় ভার বহন করা অসম্ভব বলে বিদ্যালয়টি স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হচ্ছে বলে জানানো হয়।
বিদ্যালয়টি বন্ধ ঘোষণাকে ষড়যন্ত্র দাবি করে শিক্ষার্থীরা সোনাগাজী উপজেলা শহরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। মানববন্ধন শেষে ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করে স্কুলটি চালু রাখার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে স্বারকলিপি দেয় ছাত্রী।
এসএসসি পরীক্ষার্থী ছাত্রী নাসরিন আক্তার জানান, মাত্র তিন মাস পরেই আমাদের এসএসসি পরীক্ষা। হঠাৎ বিদ্যালয়টি বন্ধ ঘোষণায় আমাদের অভিভাবকরা বিব্রত। এছাড়া অন্যান্য ছাত্রীরা এখন কোথায় কোনো স্কুলে যাবে। শিক্ষা জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আমরা চাই স্কুলটি পুনরায় চালু হোক। আশপাশের মেয়েরা পড়াশোনা করে সমাজে আলো ছড়ানোর সুযোগ পাবে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক সোহেল কামাল সিদ্দিক সোহাগ বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে স্কুলটিতে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১৬৪ জন ছাত্রী রয়েছে। এদের কথা চিন্তা করে বিকল্পভাবে প্রতিষ্ঠানটি চালানো যায় কিনা সে বিষয়ে আমরা ভাবছি। প্রতিষ্ঠানের দাতারা আর কোনো ব্যয় বহন করতে না পারায় তারা এটি বন্ধ ঘোষণা করেছেন।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ব্যারিস্টার নুরুল হক বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। আমার পক্ষে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করা এখন আর সম্ভব নয়। তাই এটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এম জহিরুল হায়াত বাংলানিউজকে জানান, বিদ্যালয়টি চালুর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দেওয়ার দাবি করে ছাত্রীরা একটি স্মারক লিপি আমাকে দিয়েছে। বিষয়টির সমাধানে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করার জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আশাকরি এটি পুনরায় চালু হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০২১
এসএইচডি/আরআইএস