জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি): বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ-২০২২ এর নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষক ঐক্য ফোরাম’ নামে শিক্ষকদের একটি নতুন প্যানেল আত্মপ্রকাশ করেছে।
নতুন প্যানেলে আওয়ামীপন্থি উপাচার্য বিরোধী শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ, বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের নেতারা রয়েছেন। এই প্যানেল থেকে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রসায়ন বিভাগের বিএনপিপন্থি শিক্ষকঅধ্যাপক মাহবুব কবির এবং সাধারণ সম্পাদক পদে আওয়ামীপন্থি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আমজাদ হোসেন। তবে বামপন্থি শিক্ষকরা তাদের প্রার্থী না দিলেও এই প্যানেলকে সমর্থন দিয়েছেন।
মূলত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই প্যানেল গঠিত হলেও এর নেপথ্যে কাজ করেছে বেশ কিছু ইস্যু। বিশেষত, ‘অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে’ উপাচার্য ফারজানা ইসলামের নামে দুর্নীতির অভিযোগ এনে উপাচার্য বিরোধী শিক্ষকরা আন্দোলন করেও তাকে কোনঠাসা করতে পারেননি। বর্তমানে সেই অভিযোগের তদন্তের কোনো অগ্রগতিও নেই। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক পর্ষদ সিনেট, ডিন, সিন্ডিকেট নির্বাচনও হয় না দীর্ঘদিন। তাই শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে যে কোনো মূল্যে জিততে চায় উপাচার্য বিরোধী প্যানেল। এভাবেই তারা অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে বোঝাতে চায় শিক্ষকরা উপাচার্য হিসেবে তাকে দেখতে চাচ্ছেন না।
তাই বিএনপিপন্থিদের জোটে আনতে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার মানসিকতা দেখিয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে শিক্ষক সমিতির ১৫টি পদের মধ্যে সভাপতি ও সহ-সভাপতিসহ সাতজন বিএনপি সমর্থিত এবং আওয়ামী লীগের আট প্রার্থী নিয়ে এই প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে উপাচার্যপন্থি বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম (এনটিএফ) খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নিতে না দেওয়ার প্রতিবাদে নির্বাচনে নিজেদের কোনো প্রার্থী দেয়নি। তবে এটিকে উপাচার্যের একটি কৌশল হিসেবে দেখছেন বিরোধীরা। অন্যদিকে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সভাপতি পদে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবু দায়েন ও সম্পাদক পদে অধ্যাপক এ কে এম মহিউদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
উপাচার্য বিরোধী প্যানেলে বিএনপি থেকে সহ-সভাপতি পদপ্রার্থী অধ্যাপক আবেদা সুলতানা বলেন, প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত ও শিক্ষকদের স্বার্থরক্ষার জন্য শিক্ষক ঐক্য ফোরামে আওয়ামী-বিএনপি একজোট হয়েছি।
এ বিষয়ে ‘শিক্ষক ঐক্য ফোরাম’ থেকে কোষাধ্যক্ষ প্রার্থী আওয়ামীপন্থি অধ্যাপক শফি মোহাম্মদ তারেক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশাসনিক কাজকে স্বচ্ছ করার স্বার্থে দল-মত নির্বিশেষে শিক্ষকরা একজোট হয়েছি। ’
অন্যদিকে, ‘শিক্ষকরা আপনাদের ভোট কেন দেবেন এবং নির্বাচিত হলে শিক্ষকদের জন্য কী কী কাজ করবেন জানতে চাইলে ভিসিপন্থি ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’ থেকে সভাপতি পদে প্রার্থী অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ বলেন, ‘আমি প্রার্থী, তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। আমার দলের নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে কথা বলবেন। '
আর উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, 'এখন তো শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, আমি চলে যাচ্ছি, নৌকা ডুবে যাবে। তাহলে কেন তারা ডোবা নৌকায় ভোট দেবে? আর প্রশ্ন হল, আমি চলে গেলেই কি নৌকা ডুবে যাবে? নৌকা যাতে না ডোবে সেজন্যই ভালো একটা শিক্ষক সমিতি উপহার দিয়ে যাচ্ছি। '
তিনি বলেন, 'বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ থেকে এতো সুন্দর একটা প্যানেল আমরা মনোনয়ন দিয়েছি। কী মেধা একেকজনের। তাদের প্রোফাইল দেখলেই বোঝা যায়। প্রত্যেকেই ক্লিন ইমেজের। আমরা কি তাদেরকে দিয়ে খারাপ কিছু উপহার দিয়েছি? ভালো একটা শিক্ষক সমিতি উপহার দিতে চাই৷ যাতে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। '
তিনি আরও বলেন, 'আমরা চাই প্রত্যেকে তার জায়গা থেকে কাজ করুক। তবে মাঝে মাঝেই বিশ্ববিদ্যালয় থামিয়ে দেওয়া, মুখ থুবড়ে ফেলা- বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি হতে পারে না। সবাইকে এক হয়ে গঠনমূলক কাজ করতে হবে। আমাদের অনেক বিরোধী শিক্ষক রয়েছেন। তাদেরকেও বিভিন্ন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। '
এদিকে গত ২৬ ডিসেম্বর জাবি কর্মচারী সমিতি ও কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচনে ভিসিপন্থিদের ভরাডুবি ও বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নতুন কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করায় শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন অনেকে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২১
পিএম/এমএমজেড