যশোর: যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) চান্স পেয়েও ভর্তি হতে পারলেন না নিপুণ বিশ্বাস। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নও গেল ধূসর হয়ে।
রোববার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে ২০২০-২১ সেশনে ৩য় ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয় যবিপ্রবির স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অনুষদের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগ। তবে, ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে জানতে পারেন রোববার (৩০ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টায়।
ভর্তির জন্য বিবেচিত শিক্ষার্থীদের বলা হয়, সোমবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে ভর্তি হতে হবে তাদের। কিন্তু কী করে সম্ভব তা? তার ভর্তি-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে নিপুণ তো তখন নীলফামারীর লক্ষ্মীচাপের নিজ বাড়িতে। তার পরেও রাতেই প্রতিবেশিদের কাছ থেকে টাকা জোগাড় করে নিয়ে নীলফামারী থেকে যশোর আসতে তার বেলা গড়িয়ে ১২টা পেরিয়ে যায়।
বিজ্ঞপ্তি অনুসারে নিদিষ্ট সময়ে উপস্থিত হতে না পারায় ভর্তি হতে পারেননি ওই শিক্ষার্থী। সময় এত কম ছিল যে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বিদায় নিতে হয়েছে তার। নিপুণ বিশ্বাসের বাড়ি নীলফামারীর সদর উপজেলা লক্ষ্মীচাপে। তার বাবা প্রেমানন্দ বিশ্বাস পেশায় একজন নাপিত। দুই ভাইয়ের মধ্যে মেধাবী নিপুণ ছোটবেলা থেকে আর্থিক অনটনের শত বাধা পেরিয়ে নীলফামারীর মশিয়ুর রহমান কলেজ থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েও ভর্তি হতে না পেরে, পরিবারের কাছে না ফিরে হতাশায় ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন ওই শিক্ষার্থী।
![](http://banglanews24.com/public/userfiles/images/BN24-22-1-2022/25-1-2022/29-1-2022/31-1-2022-AAT/Capture-1.jpg)
তিনি আরও বলেন, মধ্যে রাতে প্রতিবেশিদের কাছ থেকে এতগুলো টাকা ধার করে নিয়ে; আমার পরিবার ভর্তির জন্য পাঠালো। আমি এখানে এসে ভর্তি হতে পারলাম না। আমি আমার পরিবারকে কী জবাব দেবো? যদি সময়সীমা বাড়ানো হতো তাহলে আমি সঠিক সময়ে উপস্থিত হতে পারতাম। তাছাড়াও আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো মেসেজও দেওয়া হয়নি। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ওয়েটিং লিস্টে থাকায় আমি মেসেজ পেয়েছি, কিন্তু এখানকার প্রশাসন কোনো মেসেজ দেয়নি। আমাকে যদি আগে থেকে মেসেজ দেওয়া হতো অথবা নোটিশের পরের দিনই সময় না দিয়ে একটা দিন পরে দেওয়া হতো তাহলে আমি সঠিক সময়ে এসে ভর্তি হতে পারতাম।
এই বিষয়ে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মো. তানভীর ইসলাম বলেন, রোববার দুপুরে একজন শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিল করায় আমরা ৩য় ভর্তি বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করি। আমাদের উপাচার্য স্যারের নির্দেশনা ছিল ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সব ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। আজকে আমাদের তিনটি বিভাগসহ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তির কাজ ছিল। আমরা সময় বাড়িয়ে দুপুর ১২টায় শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে আসা একজন শিক্ষার্থী থাকায় আমরা তাকেই ভর্তি করি। নীলফামারী থেকে আসা নিপুণ নামে ওই ছেলেটির বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আমরা আর কিছু বলার নেই। নিয়মের মধ্যে থেকেই আমাদের অনেক সময় কঠিন সিদ্ধান্তে যেতে হয়।
এই বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনের মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২২
ইউজি/এএটি