ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত প্রত্যেকের আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষাগত যোগ্যতার স্বীকৃতির লক্ষ্য পূরণ হয় সমাবর্তনের মাধ্যমে। তবে নানা কারণে নিয়মিত এ আয়োজন সম্পন্ন করতে পারে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কালো গাউন আর ক্যাপ পরিহিত সদ্য গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি বিজড়িত হল, বিভাগের সঙ্গে নিজেকে ফ্রেমে যুক্ত করছেন। ক্যাম্পাসের ঐতিহাসিক স্থান অপরাজেয় বাংলা, টিএসসি কিংবা কার্জনও এ তালিকায় অন্তর্ভূক্ত থাকছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিয় শিক্ষক, বন্ধু-বান্ধবের সাঙ্গে সফলতার পেছনে যাদের অবদান অনেক বেশি প্রিয় মা-বাবাকে নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরে ঘুরে ছবি তুলছেন অনেকে।
মাস্টার্স সম্পন্ন করে অনেকে ক্যাম্পাস ছাড়ায় গাউন ও উপহার সামগ্রী নিতে এসেছেন মহিউদ্দীন আহমেদ। বাংলানিউজকে তিনি বলেন,অনেকদিন পর প্রাণের ক্যাম্পাসে ফিরে বন্ধু বান্ধব ও শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করে অনেক ভালো লেগেছে। এই সময়টার জন্য অনেক দিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম। আশা করছি সবার সঙ্গে চমৎকার একটা সময় কাটাবো।
আরেক সদ্য গ্র্যাজুয়েট সামিয়া রহমান, বাবা মায়ের সঙ্গে এসেছেন ক্যাম্পাসে। সমাবর্তন নিয়ে আলাপকালে জানান, জীবনের সবচেয়ে মুল্যবান একটা সময় সামনে। এই সময়টাকে পরিবার বন্ধু-বান্ধব সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে স্মরণীয় করে রাখতে চাই।
সিনিয়রদের এমন দিনে উচ্ছ্বসিত বর্তমান শিক্ষার্থীরাও। তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আল এজাজ বলেন, সিনিয়র ভাই আপুদের কালো গাউন পরে এমন পদচারণা দেখে সত্যিই মুগ্ধ হচ্ছি। অনেক দিন পর মনে হচ্ছে আমি একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশে আছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত প্রতিবছরই সমাবর্তন আয়োজন করা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯ নভেম্বর (শনিবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে। সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ সভাপতিত্ব করবেন। নোবেল বিজয়ী ফরাসী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. জ্যাঁ তিরোল। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। তাঁকে সম্মানসূচক Doctor of Laws (Honoris Causa) ডিগ্রি প্রদান করা হবে।
৫৩তম সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য ৩০ হাজার ৩৪৮ জন গ্র্যাজুয়েট ও গবেষক রেজিস্ট্রেশন করেছেন। অনুষ্ঠানে ১৩১ জন কৃতী শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীকে ১৫৩টি স্বর্ণপদক, ৯৭জনকে পিএইচডি, ২জনকে ডিবিএ এবং ৩৫জনকে এম ফিল ডিগ্রি প্রদান করা হবে। অধিভুক্ত সাত কলেজের রেজিস্ট্রেশনকৃত গ্রাজুয়েটরা ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে অনলাইনে ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজ ভেন্যু থেকে সমাবর্তনে অংশগ্রহণ নেবেন।
সমাবর্তন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গ্র্যাজুয়েটদের নির্দেশনা দিয়েছে। সেগুলো হলো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটরা খেলার মাঠের সুইমিংপুল সংলগ্ন গেইট দিয়ে সমাবর্তনস্থলে প্রবেশ করবেন। তাদের জন্য সকাল সাড়ে ৯ টায় গেইট খোলা হবে এবং তারা সকাল ১১টার মধ্যে অবশ্যই সমাবর্তনস্থলে আসন গ্রহণ করবেন। অনুষ্ঠানস্থলে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করার পর মঞ্চের আশেপাশে ও অন্যান্য স্থানে ঘোরাফেরা করা যাবে না। আমন্ত্রিত অতিথিরা জিমনেসিয়াম সংলগ্ন গেইট দিয়ে সমাবর্তনস্থলে প্রবেশ করবেন। তাঁদের জন্য সকাল ১০টায় গেইট খোলা হবে এবং তাঁরা সকাল সাড়ে ১১ টার মধ্যে অবশ্যই সমাবর্তন স্থলে আসন গ্রহণ করবেন। সমাবর্তনস্থলে প্রবেশের জন্য মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক।
সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণপত্র এবং জাতীয় পরিচয়পত্র প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আইডিপাসপোর্ট সঙ্গে আনতে হবে। আমন্ত্রণপত্র হস্তান্তরযোগ্য নয়। সমাবর্তনস্থলে মোবাইল ফোন, হাতব্যাগ, ব্রিফকেস, ক্যামেরা, ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ছাতা ও পানির বোতল নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সমাবর্তনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সমাবর্তন অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকল সদস্য, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ফায়ার সার্ভিস, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং গণমাধ্যমকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সদয় সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২২
এসকেবি/এসআইএস