ঢাকা: জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বুধবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জানান আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ করা হবে।
তফসিলের পর আবারও আলোচনায় এসেছে- নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে। বিএনপিসহ অন্যান্য দল বর্তমান সরকারের পদত্যাগ দাবি করলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে তাদের অধীনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে কিংবা মনোনয়ন বিক্রি শুরুর পর থেকে নির্বাচনকালীন সরকার দায়িত্ব পালন ও রুটিন কাজ করবে বলে সরকার পক্ষ থেকেই বলা হচ্ছিলো কিছু দিন থেকেই।
নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হলেও সেই রোডম্যাপে নির্বাচনকালীন সরকারের কোনো রূপরেখা উল্লেখ করা হয়নি। তবে সংঘাত পরিহার করে রাজনৈতিক দলগুলোকে সদয় হয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সমাধান খোঁজার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি (রোববার)।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, সংসদের সাধারণ নির্বাচন সাধারণত পাঁচ বছর অন্তর অন্তর হয়ে থাকে। সংবিধানের ১২৩(৩)(ক) অনুচ্ছেদের বিধান মতে সংসদের মেয়াদপূর্তির আগের ৯০ দিনের মধ্যে সংসদের সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সংবলিত এ নির্দেশনা নির্বাচন কমিশন সরকারের নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর নিরপেক্ষ সহায়তা নিয়ে সম্পন্ন করে থাকে।
এদিকে তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ আনন্দ মিছিলসহ মনোনয়ন বিক্রির তারিখ ঘোষণা করলেও তফসিল প্রত্যাখান করেছে বিএনপি ও সমমনা কয়েকটি দল। চলমান অবরোধের মধ্যে বৃহস্পতিবার হরতালও ডাকা হয়েছে অন্যান্য দলের পক্ষে। তাদের দাবি সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকার। কিন্তু তফসিল ঘোষণার দিন নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আর স্পস্ট করে কিছু বলেননি।
তফসিল ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনের ট্রেনে আপনি উঠবেন না, ট্রেন কি থেমে থাকবে? নির্বাচনী ট্রেন মিস করলে কারও জন্য থেমে থাকবে না। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে, এর বিকল্প নেই।
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার মধ্যে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে- প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এই বক্তব্য গত কয়েকদিন আগেও সরাকর প্রধানসহ বলেছেন ক্ষতাসীন দলের কয়েকজন মন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলজিয়াম সফর শেষে দেশে ফিরে গত ৩১ অক্টোবর গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনকালীন সরকার ও মন্ত্রিপরিষদ কেমন হবে তা নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের নির্বাচনে নির্বাচনকালীন সরকার ২০১৮ সালের মতোই হবে।
ওই দিন শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৮ সালে সেভাবেই হয়েছিল। ২০১৪ সালে কিছু মন্ত্রী অন্যান্য দল থেকে নিয়োগ করেছিলাম। এরপর ২০১৮ সালে আর সেই পদ্ধতি করি নাই। এবারও সেভাবেই হবে। সরকার থেমে থাকবে না। সরকারের দৈনন্দিন যে কাজগুলো, রুটিন কাজগুলো করতে হবে। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া, ইন্ডিয়া, কানাডা বা ইংল্যান্ডে যেভাবে নির্বাচন হয় বাংলাদেশেও সেভাবে নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার কে হবে না হবে, সেদিকে আমরা যাচ্ছি না। ইংল্যান্ডেও আলাপ করেছি, তাদেরটা দেখেছি। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা যেসব দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র আছে, সেভাবেই করা হবে। অর্থাৎ সে সময় আমরা যারা থাকব, ওই আমরাই নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে আমাদের রুটিন ওয়ার্ক, দায়িত্ব পালন, দৈনন্দিন কাজকর্ম করব, যাতে সরকার অচল হয়ে না যায়, সেটা আমরা করব।
নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভার আকার কেমন হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আকার-বিকার সেটা যখন যে রকম হবে, দেখা যাবে। আকার ছোট করলে যেটা সমস্যা হয়, ২০১৪ সালে দেখেছি অনেক মন্ত্রণালয়ের কাজ আর হয় না। কাজগুলো বাধাগ্রস্ত হয়। কাজগুলো যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, আমাদের উন্নয়নের ধারাটা যাতে অব্যাহত থাকে, আমাদের সেটাই প্রচেষ্টা।
তিনি বলেন, আমাদের আরপিও অনুযায়ী যখনই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে এবং নমিনেশন সাবমিট হবে তখন থেকে আর সরকারি সুযোগ-সুবিধা মন্ত্রীরা ব্যবহার করতে পারবেন না। একজন প্রার্থী হিসেবেই ভোট চাইতে হবে।
এরআগে গত ২৬ অক্টোবর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেলেন, নির্বাচন কমিশন যখনই তফসিল ঘোষণা করবে, তখন থেকে বর্তমান সরকারই নির্বাচনকালীন সরকার।
আইনমন্ত্রী বলেন, সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকার বলে কিছু নেই। আবার সংবিধান অনুযায়ী যখন নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করবে, সেই মুহূর্ত থেকে এ সরকার নির্বাচনকালীন সরকার।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হওয়ার পর গত দুটি নির্বাচন (২০১৪ ও ২০১৮ সালে) ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হয়েছে। আগামী দ্বাদশ নির্বাচন বর্তমান সরকারে অধীনে হচ্ছে। ২০১৪ সালে মন্ত্রিসভার আকার ছোট করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন মন্ত্রিসভায় নতুন মুখও এসেছিল। তবে ২০১৮ সালে আর তা ছোট বা বড় হয়নি। এবারও ছোট হওয়ার আর আশঙ্কা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২৩
এমআইএইচ/এমএম