ঢাকা, বুধবার, ১ মাঘ ১৪৩১, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪ রজব ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

ছবি ছাড়া এনআইডি’র দাবিতে এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম মহিলা আনজুমানের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৫
ছবি ছাড়া এনআইডি’র দাবিতে এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম মহিলা আনজুমানের

ঢাকা: ছবিছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার দাবি জানিয়েছে মহিলা আনজুমান। এজন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিয়েছে সংগঠনটি।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে তারা এই দাবিপূরণের আল্টিমেটাম দেয়। "১৬ বছর যাবত পর্দানশীন নারীদের এনআইডি বঞ্চিত করে মানবাধিকার হরণের প্রতিবাদে" মহিলা আনজুমান বিক্ষোভ সমাবেশটি আয়োজন করে।

মহিলা আনজুমানের আহবায়ক শারমিন ইয়াসমিন বলেন, তিনটি দাবিতে তারা এই কর্মসূচি দিয়েছে। প্রথমত, বিগত ১৬ বছর যাবত পর্দানশীন নারীদের মানবাধিকার হরণকারী ইসি কর্মকর্তাদের বিচার করতে হবে। দ্বিতীয়ত, পর্দানশীন নারীদের ধর্মীয় ও প্রাইভেসির অধিকার অক্ষুণ্ন রেখেই এনআইডি প্রদান করতে হবে। তৃতীয়ত, পর্দানশীন নারীদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেয়ায় মহিলা অফিস সহকারী বাধ্যতামূলক করতে হবে।

সমাবেশে আয়োজক সংগঠনের সদস্য সচিব সুমাইয়া আহমাদ মুনা, সদস্য মাশহুরাহ ফিরদাউসিসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বক্তারা বলেন, গত ১৬ বছর যাবৎ ইসির কতিপয় স্বৈরাচারী কর্মকর্তা শুধুমাত্র মুখচ্ছবির অজুহাতে পর্দানশীন নারীদের নাগরিকত্ব আটকে রেখেছে, যা এক প্রকার মানবতাবিরোধী অপরাধ। এতে পর্দানশীন নারীরা মৌলিক ও নাগরিক অধিকার বঞ্চিত হয়ে নিদারুণ কষ্ট করছেন। যে বা যারা গত ১৬ বছর যাবত পর্দানশীন নারীদের মানবাধিকার হরণ করেছে, আমরা তাদের বিচার চাই। মহিলা আনজুমানের সদস্যরা তাদের ধর্মীয় অধিকার এবং প্রাইভেসির অধিকার অক্ষুণ্ন রেখে এনআইডি চায়। সেটি দিতে হবে। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে দাবি না মানলে দেশব্যাপী ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মাঠে নামবে।

বক্তারা আরো বলেন, এনআইডির মুখচ্ছবি পরিবর্তনযোগ্য। এ থেকে প্রমাণিত হয়, মুখচ্ছবি পরিচয় যাচাইয়ের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম নয়। অথচ সেই মুখচ্ছবির অজুহাতেই পর্দানশীন নারীদের নাগরিকত্ব বঞ্চিত করা হচ্ছে। এছাড়া ছবি দিয়ে শনাক্তকরণ দুর্নীতিবান্ধব পদ্ধতি, অপরদিকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে শনাক্তকরণ দুর্নীতিরোধক পদ্ধতি। যেমন আগে ব্যাংকগুলোতে ছবি দেখে পরিচয় যাচাইয়ে এক ব্যক্তির একাধিক পরিচয়ে ঋণ উত্তোলনের মত প্রতারণার ঘটনা ঘটে। এ প্রতারণা রুখতে বর্তমানে ব্যাংক ঋণ উত্তোলনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আবার ছবি দেখে পরিচয় যাচাইয়ে একজন ব্যক্তির একাধিক এনআইডি তৈরির মত ঘটনা ঘটে। এক্ষেত্রে দ্বৈত এনআইডির সমস্যাও দূর হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাইয়ের মাধ্যমে। আবার একটা সময় বাংলাদেশিদের সঙ্গে চেহারার মিলকে পুঁজি করে প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশে পাড়ি জমায়। কিন্তু যখনই তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে যাচাই শুরু হয়, তখনই রোহিঙ্গাদের প্রতারণা ধরা পড়ে এবং সমস্যার সমাধান হয়। আবার দেখা যায়, অপরাধীরা বার বার রূপ বদলানোয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য চেহারার ছবি দেখে অপরাধীকে ধরা কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। অনেক সময় চেহারার মিল থাকায় নিরাপরাধ ব্যক্তি অপরাধী হিসেবে ধরা পরে যায়। এই সমস্যা সমাধানে আইনশৃঙ্লাবাহিনী অপরাধী শনাক্তে ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তির আশ্রয় নিচ্ছেন। যেমন- এলিট ফোর্স  র‍্যাব ফিঙ্গারপ্রিন্টের ওআইভিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, পুলিশের সিআইডি ফিঙ্গারপ্রিন্টের এএফআইএসপ্রযু্ক্তি ব্যবহার করছে। অর্থাৎ নির্ভুল যাচাইয়ের জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট এখন সর্বাধুনিক ও গ্রহণযোগ্য মাধ্যম। উল্লেখ্য কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর যুগে ছবির অপব্যবহার অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এক ছবি একাধিক লোক ব্যবহারের প্রযুক্তিও আবিষ্কার হয়েছে। এসব কারণে আধুনিক বিশ্ব মুখচ্ছবি দেখে পরিচয় যাচাই বর্জন করেছে।

তারা বলেন, পর্দানশীন মহিলাদের এনআইডি প্রদানে আইনেও কোন বাধা নেই। বিশেষ করে, পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০১০ এবং ২০২৩-এ পরিচয় শনাক্তে চেহারার ছবির কথা উল্লেখ নাই। এমনকি বায়োমেট্রিক যাচাইয়ে ফেসিয়াল রিকগনিশনকেও বাধ্যতামূলক করা হয়নি। কিন্তু তারপরও স্বৈরাচারী মনোভাব থেকেই পর্দানশীন নারীদের নাগরিকত্ব বঞ্চিত করে রেখেছিলো সাবেক ইসি কর্মকর্তারা। পর্দানশীন নারীরা চান, নতুন ইসি কর্মকর্তারা আর সেই পথে না হাঁটুক। পর্দানশীন নারীদের ধর্মীয় ও প্রাইভেসির অধিকার অক্ষুণ্ন রেখেই অবিলম্বে তাদের এনআইডি প্রদান করুক।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৫
ইইউডি/এমএম
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।