ঢাকা: বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ কার্যক্রমে মিথ্যা বা ভুল তথ্য নিয়ে ভোটার করা হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক বা সমমানের কর্মকর্তা বা জনপ্রতিনিধিকে দায় নিতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হালনাগাদ কার্যক্রমে তথ্য সংগ্রহের সময় অনেকেই ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভোটার হতে চায়।
ইসির নির্বাচন সহায়তা শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরী নির্দেশনাটি পাঠিয়েছেন।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি, ২০২৫-এ ভোটারযোগ্য ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ ও সুপারভাইজার কর্তৃক যাচাই ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সম্পন্ন করা হবে। ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি অথবা তার আগে যাদের জন্ম তাদের ও বিগত ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে যারা বাদ পড়েছেন তাদের ভোটার তালিকাভুক্তি ও মৃত ভোটারদেরকে ভোটার তালিকা হতে কর্তন করা হবে। একইসঙ্গে আবাসস্থল পরিবর্তনের কারণে স্থানান্তরের বিষয়েও কার্যক্রম চলবে।
নিবন্ধন কেন্দ্রে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধন কার্যক্রম (বায়োমেট্রিক গ্রহণসহ) চলবে। এ কর্মসূচিতে ভোটার নিবন্ধন ফরমে (ফরম-২) যাচাইকারীর স্বাক্ষর নিতে হবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, ভোটার তালিকা বিধিমালা, ২০১২ এর বিধি ১২(ঘ) অনুসারে নিবন্ধনকালে ভোটার নিবন্ধন ফরম (ফরম-২) এ যাচাইকারীর স্বাক্ষর নেওয়ার বিধান প্রতিপালনের লক্ষ্যে ভোটার নিবন্ধন ফরমে (ফরম-২) যাচাইকারী হিসেবে জনপ্রতিনিধি বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বা মাদরাসা বা কলেজের শিক্ষক বা প্রধান শিক্ষক বা সুপার বা অধ্যক্ষ বা সরকারি কর্মকর্তার স্বাক্ষর নেওয়া এবং যাচাইকারীর নাম ও পদবী সম্বলিত সিল ব্যবহারের বিষয়ে কমিশন সদয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।
এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিবন্ধন কেন্দ্রে নিবন্ধনের সময় কোনো জনপ্রতিনিধি বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বা মাদরাসা বা কলেজের শিক্ষক বা প্রধান শিক্ষক বা সুপার বা অধ্যক্ষ বা সরকারি কর্মকর্তা নিবন্ধন কেন্দ্রে উপস্থিত থেকে যাচাইকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তা সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রেশন অফিসার নিশ্চিত করবেন।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ ভোটার তালিকা হালনাগাদের বিষয়ে বলেন, এটি নিয়ে যাতে কোনো প্রশ্ন না ওঠে সে জন্যই আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ করছি। এক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভোটার হওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। এক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ২০ জানুয়ারি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু করে ইসি। তবে একেক উপজেলায় একেক সময় কার্যক্রমটি শুরু হচ্ছে। এখনো কিছু কিছু এলাকার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন ইতিমধ্যে বলেছেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করা। পুরো কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত থাকবে ৬৫ হাজার লোকবল। যারা ১ দশমিক ৫২ শতাংশ নাগরিককে ভোটার তালিকায় যুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করবেন।
এদিকে ২০২২ সালে নেওয়া তিন বছরের তথ্যের শেষ ধাপের হালনাগাদ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এতে ১৮ লাখের মতো ভোটার আগামী মার্চে যোগ হতে পারে। সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী, দেশে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। বাড়ি বাড়ি হালনাগাদে ১৯ লাখ নতুন ভোটার তালিকায় যোগ হতে পারে।
২০০৭-২০০৮ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর এর আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে ছয়বার। ২০০৯-২০১০ সাল, ২০১২-২০১৩ সাল, ২০১৫-২০১৬ সাল, ২০১৭-২০১৮ সাল, ২০১৯-২০২০ ও ২০২২-২০২৩ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে নির্বাচন কমিশন।
ভোটার তালিকা হালনাগাদে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য যেসব কাগজপত্র তথ্য সংগ্রহকারীদের দিতে হবে:
ক) ১৭ ডিজিটের অনলাইন জন্ম সনদের কপি
খ) জাতীয়তা/নাগরিকত্ব সনদের কপি
গ) নিকট আত্মীয়ের এনআইডির ফটোকপি (বাবা-মা, ভাই-বোন প্রভৃতি)
ঘ) এসএসসি/দাখিল/সমমান, অষ্টম শ্রেণি পাশের সনদের কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
ঙ) ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি/চৌকিদারি রশিদের ফটোকপি)
ভোটার হওয়ার সময় যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে:
ক) নিজের নাম, বাবা-মায়ের নাম, জন্ম নিবন্ধন বা শিক্ষা সনদের সঙ্গে হুবহু মিলিয়ে লিখতে হবে
খ) জন্ম তারিখ অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন বা শিক্ষা সনদ অনুযায়ী হতে হবে
গ) স্থায়ী ঠিকানা লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভোটারের প্রকৃত স্থায়ী ঠিকানা লিখতে হবে
ঘ) কোনো অবস্থাতেই দ্বৈত বা দুইবার ভোটার হওয়া যাবে না।
এক সতর্কবার্তায় ইসি জানিয়েছে, একাধিকবার ভোটার হওয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ একাধিকবার ভোটার হলে আঙুলের ছাপ পরীক্ষার মাধ্যমে তা সহজেই সনাক্ত করা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৫
ইইউডি/এমজে