ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

তিনস্তরের নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা পড়েছে রাজশাহী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৮
তিনস্তরের নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা পড়েছে রাজশাহী তিনি সিটিতে নিরাপত্তায় ৪৪ প্লাটুন বিজিবি সদস্য নামানো হয়েছে/ফাইল ছবি

রাজশাহী: রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচন উপলক্ষে তিনস্তরের নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে রাজশাহী মহানগরীকে। এ লক্ষ্যে মহানগর পুলিশের ১২টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সদর দফতরের কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

নির্বাচনকালীন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বর্তমানে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যরা যৌথভাবে কাজ করছেন। পাশাপাশি তাদের সহায়তায় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও সাদা পোশাকে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন।

 

এছাড়া রাসিক নির্বাচন সুন্দর, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আয়োজন ও নিরাপত্তার জন্য যানবাহন ও বৈধ অস্ত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (ভারপ্রাপ্ত) পারভেজ রায়হান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিষেধাজ্ঞার এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘২৭ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত সিটি করপোরেশন এলাকায় সব ধরনের বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ চলাচল, অস্ত্র বহন বা প্রদর্শন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। তবে এতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তা কর্মীরা এ নিষেধাজ্ঞার অর্ন্তভূক্ত হিসেবে বিবেচিত হবে না’।

যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ২৯ জুলাই মধ্যরাত থেকে ৩০ জুলাই মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ ভ্যান, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পো, বেবিট্যাক্সি/অটোরিকশা ও ইজিবাইকসহ স্থানীয়ভাবে পরিচিত অন্যান্য সব যন্ত্রচালিত যানবাহন যেমন: নসিমন, করিমন, ভটভটি, টমটম ইত্যাদি বন্ধ থাকবে। এছাড়া মোটরসাইকেল বন্ধ থাকবে ২৮ জুলাই মধ্যরাত থেকে ৩১ জুলাই ভোর ৬টা পর্যন্ত।

তবে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে নিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবহৃত যানবাহন এবং জরুরি চিকিৎসা, ফায়ার সার্ভিস ও বিদ্যুৎসহ অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় ইউটিলিটি সেবার কাজে ব্যবহৃত যানবাহন নির্বাচনকালীন এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।

এসব আদেশ অমান্য করলে তা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এজন্য অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

এদিকে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী কমিশনার (সদর) ইফতে খায়ের আলম জানিয়েছেন, নির্বাচনে যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শহরজুড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

বর্তমানে মহানগরীর কাঁটাখালি, নওদাপাড়া ও কাশিয়াডাঙ্গা এ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ মুখে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি ৪০০ র‌্যাব সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। বর্তমানে মহানগরের বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে র‌্যাবের টহল চলছে।

ইফতে খায়ের আলম জানান, ঢাকা হেডকোয়াটারের নির্দেশনা অনুযায়ী এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় মহানগরের ১২ থানা এলাকার সব ফাঁড়িতে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাড়তি সতর্কতা ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মহানগরের প্রবেশমুখ ছাড়াও তালাইমারী, কোর্ট চত্বর, প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট, মণিচত্বর, সোনাদীঘির মোড়, বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন, লক্ষীপুর, তালাইমারী শহীদ মিনার রোড, সরকারি অফিস-আদালত এবং বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকাসহ আরও কয়েকটি এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারিও।

সিনিয়র সহকারী কমিশনার আরও জানান, মহানগরের এসব পয়েন্টে সন্দেহজনক ব্যক্তি দেখলেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদসহ দেহ তল্লাশির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে প্রতিটি আবাসিক হোটেলে আসা ব্যক্তিদের গতিবিধি নজরদারি এবং আবাসিক এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।

রাসিক নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার আতিয়ার রহমান জানান, রাজশাহীতে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৮টি এবং বুথের সংখ্যা ১ হাজার ২০টি। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে প্রিজাইডিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া প্রতিটি বুথে একজন করে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং দুইজন করে পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন।  

১৩৮টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে এবার ১১৪টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে এই কেন্দ্রগুলো বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে ১৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

জানতে চাইলে আতিয়ার রহমান বলেন, আজ থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডে ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। আর সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডের জন্য ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। তারা ভোটের দু’দিন আগ থেকে নির্বাচনী আচরণবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন।

এছাড়া সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য পুলিশের একটি করে মোবাইল টিম কাজ করবে। আর পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সমন্বয়ে গঠিত দুইটি করে ওয়ার্ডের জন্য একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। অর্থাৎ ১৫টি স্ট্রাইকিং ফোর্স ৩০টি ওয়ার্ডের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে।  

নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে ১ হাজার ৯০০ জন আনসার, ৩ হাজার পুলিশ ও ৪০০ র‌্যাব সদস্য কাজ করবেন। আনসার, পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যরা নির্বাচনের সময় যৌথভাবে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের কাজ করবেন।

রাসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার সৈয়দ আমিরুল ইসলাম জানান, সিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য এরইমধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে।  

সোমবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে বলেও জানান রিটার্নিং অফিসার।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৮
এসএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।