ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

ইসি সার্ভারে ভূত: ১২ বছর বয়স সংশোধন, জানে না কেউ

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২১
ইসি সার্ভারে ভূত: ১২ বছর বয়স সংশোধন, জানে না কেউ

ঢাকা: বাতিল হয়ে যাওয়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনের একটি আবেদন পুনরায় গ্রহণ করে কে বা কারা ১২ বছর বয়স কমিয়ে দিয়েছে এক ব্যক্তির। আর পুরো বিষয়টিই ঘটেছে সংশ্লিষ্ট সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে।

এনআইডি সংশোধন করতে বর্তমানে কার্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিএমএস) ব্যবহার করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে প্রতিটি কর্মকর্তার নামে ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা রয়েছে। ফলে কোনো এনআইডি সংক্রান্ত কে কী কাজ করছেন, তা সংরক্ষিত থাকছে। মূলত, দুর্নীতিরোধে এই সিস্টেমটি ওয়াচডগের কাজ করে। কিন্তু এই ব্যবস্থাকেও ফাঁকি দিয়ে কে বা কারা শাহীন নামে এক ব্যক্তির ১২ বছর বয়স সংশোধন করে দিয়েছে।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, এই সিস্টেমটি পাশ কাটিয়ে দুর্নীতির ঘটনাটি ঘটেছে। অর্থাৎ একজন কর্মকর্তার ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে এক ব্যক্তির এনআইডি সংশোধন করা হয়েছে, যেখানে কারো আইডিতে ঢুকতে গেলে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ডের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু ওই কর্মকর্তার ফোনে কোনো ওটিপিও যায়নি। এক ভৌতিক ব্যাপার বটে!

অতি সম্প্রতিই টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল বাতেনের ইউজার আইডিতে এই কাণ্ড সম্পন্ন করেছে কে বা কারা।

জানা গেছে, মির্জাপুরের গোড়াই ইউনিয়নের কদিম দেওহাটা গ্রামের মো. শাহীন হোসেন সারিং (এনআইডি নম্বর ১৯৭৬৯৩১৬৬৫৫৯৫৭৩৭৩) নামে এক ব্যক্তির বয়স ১২ বছর সংশোধন করা হয়েছে অনৈতিকভাবে।

বিষয়টি নজরে আসার পর অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ মোশারফ হোসেন ব্যাখ্যা চান আব্দুল বাতেনের কাছে।

আব্দুল বাতেন গত ৮ মার্চ জবাবে লেখেন, মো. শাহীন হোসেন সারিং সংশোধনের আবেদনটি বাতিলের জন্য আবেদন করেন। আবেদনপত্রটি ২৩ ফেব্রুয়ারি আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর প্রেরণ করি। তখন আবেদনটি ‘গ’ ক্যাটাগরিতে ছিল। কিন্তু ১ মার্চ ১৭ ঘণ্টা ৪৯ মিনিট ২২ সেকেন্ড সময়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসারের ইউজার আইডি ব্যবহার করে আবেদনের ক্যাটাগরি ‘গ’ থেকে ক্যাটাগরি ‘ক’-তে পরিবর্তন করা হয়েছে এবং একই ইউজার আইডি ব্যবহার করে একই সময়ে অর্থাৎ বেলা ১৭ ঘণ্টা ৪৯ মিনিট ২২ সেকেন্ড সময়ে সংশোধন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আমি এ সংশোধনের বিষয়ে অবগত নই। এছাড়া একই সময়ে ক্যাটাগরি পরিবর্তন ও সংশোধন অনুমোদন করা হয়েছে। কাজেই বিষয়টিতে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘গ’ ক্যাটাগরির আবেদনপত্র ‘ক’ ক্যাটাগরি করার ক্ষমতা আমাকে দেওয়া হয়নি। এছাড়া সিএমএস থেকে আমার মোবাইলে কোনো ওটিপি আসেনি। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদনের জন্ম তারিখ ১২ (বার) বছর সংশোধন করা আমার আওতাভুক্ত নয়, তা আমার জানা রয়েছে।

অন্যদিকে আমি যে আবেদনটি বাতিলের জন্য আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর প্রেরণ করেছিলাম, সে আবেদন অনুমোদন করা একজন অধীনস্থ অফিসার হিসেবে আমার পক্ষে সম্ভব নয় এবং তা আমি করতে পারি না।

আব্দুল বাতেন আরও বলেন, আমি মির্জাপুর উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব থাকাকালে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের কোনো আবেদন অনুমোদন করিনি। এই অবস্থায় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার ইউজার আইডি ব্যবহার করে কীভাবে ক্যাটাগরি পরিবর্তন হলো এবং ১২ বছর বয়স সংশোধন হলো সে বিষয়ে আমি অবগত নই।

আব্দুল বাতেনের ব্যাখ্যা পেয়ে ময়মনসিংহ অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ মোশারফ হোসেন তদন্তের ব্যবস্থা করে দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনতে এনআইডি মহাপরিচালকের কাছে সুপারিশ করেছেন।

১১ মার্চ স্বাক্ষরিত ওই সুপারিশে তিনি লিখেছেন, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার নিকট ব্যাখ্যা চাওয়া হলে তিনি উল্লেখ করেন যে, তার মোবাইলে কোনো ওটিপি প্রেরণ ব্যতিরেকে কীভাবে, কখন তার ইউজার আইডি ব্যবহার করে কে বা কারা এ কার্য করেছেন তা তিনি মোটেও অবগত নন। তাই আবেদনটি কীভাবে ‘গ’ ক্যাটাগরি থেকে ‘ক’ ক্যাটগরিতে স্থানান্তরিত হলো এবং ১২ বছর বয়স সংশোধনের বিষয়টি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার ইউজার ব্যবহার করে ‘অ্যাপ্রুভড’ হলো সে বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে তদন্তপূর্বক প্রকৃত দোষী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে বিধি মোতাবেক শাস্তির আওতায় আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ইসির এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালক নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, আমার বিষয়টি মনে নেই। ফাইল দেখে বলতে হবে।

বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে এনআইডি সংশোধন সংক্রান্ত আবেদনগুলো চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। ‘ক’ থেকে ‘ঘ’ পর্যন্ত ক্যাটাগরিগুলো গুরুত্ব বিবেচনায় সংশোধনের এখতিয়ার পান একেক পদমর্যাদার কর্মকর্তা। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ আবেদনটি সংশোধনের এখতিয়ার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার হাতে। তিনি কোনো আবেদন সংশোধন করতে না পারলে তা জেলা, আঞ্চলিক, কমিশন—এভাবে ক্যাটাগরি পরিবর্তন হয়ে উপরের দিকে আসে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২১
ইইউডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।