ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

ইভিএমে ত্রুটি: হ্যাকারদের ‘সহায়তা’ নেওয়ার ভাবনা

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২
ইভিএমে ত্রুটি: হ্যাকারদের ‘সহায়তা’ নেওয়ার ভাবনা

ঢাকা: ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ত্রুটি খুঁজতে হ্যাকারদের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। এতে কোনো ত্রুটি ধরা পড়লে যন্ত্রটির অধিকতর উন্নয়ন করা যাবে।

সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে ভোটযন্ত্রটিতে ভোটগ্রহণে দীর্ঘসূত্রিতার কারণ চিহ্নিত করতে গঠিত টেকনিক্যাল কমিটি এমন প্রস্তাব দিয়েছে। এ যাবত যত নির্বাচন হয়েছে এই যন্ত্রে, এতে ভোট পড়ার হার ছিল সামগ্রিকভাবে ৬০ শতাংশের নিচে। কেবল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৭০ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পড়েছে।

এছাড়া ইভিএমে ভোট দিতে এসে ভোটারদের প্রতিবারই কম-বেশি পড়তে হয়েছে বিড়ম্বনায়। বিশেষ করে বয়স্ক, শ্রমিক শ্রেণির ভোটারদের আঙুলের ছাপ না মেলায় অনেককে ফিরে যেতে হয়েছে। আর ভোটগ্রহণেও দেখা গিয়েছে দীর্ঘসূত্রিতা। এজন্য ভোটার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলো আঙুল তুলেছে ইসির দিকেই।

এ অবস্থায় ইভিএমে কম ভোট পড়ার কারণ, দীর্ঘসূত্রিতা নিরসনের উপায় খুঁজে বের করতে একটি টিকনিক্যাল কমিটি গঠন করে দেয় সংস্থাটি। বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ওই কমিটি বিস্তর আলোচনা করে দুটি বিষয়ের প্রতি জোর দেওয়ার সুপারিশ করেছে। এর একটি হচ্ছে ইভিএমকে আরও যুগোপযোগী করতে এবং অন্যটি হচ্ছে হ্যাকারদের জন্য এই মেশিন উন্মুক্ত করে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া। এছাড়াও বেশকিছু সুপারিশ এসেছে বলে জানা গেছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমান কমিশনের মেয়াদ আছে আর মাত্রা কয়েকদিন। নতুন কমিশন আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে নতুন কমিশনের কাছেই বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে।

এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোর কুমার দেবনাথ বলেন, টেকনিক্যাল কমিটি জানিয়েছে, কোনো ভোটারের আঙুলের ছাপ প্রথমবার না মিললে ৩০ থেকে ৪০ সেকেন্ড সময় নেয়। তারপর আবার চেষ্টা করতে হয়। এজন্য ইভিএমে ভোটগ্রহণে দেরি হয়। আবার ভোটারদের ইভিএম নিয়ে কারিগরি জ্ঞান কম থাকার কারণে দেরি হয়। মেশিনের কারণে কোনো দেরি হচ্ছে না।

টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশ হলো—ইভিএমের জন্য গবেষণাগার নির্মাণ করে প্রতিনিয়ত যুগোপযোগী করতে হবে। এছাড়া মেশিনগুলো হ্যাকারদের কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে তারা ভোটযন্ত্রটির ত্রুটি বের করে আনতে পারবে। আর আয়োজনটা হতে হবে সবার জন্য উন্মুক্ত। আর এই সুপারিশগুলো নতুন কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হবে।

২০১১ সালে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোটগ্রহণ চালু করে। সে সময় তারা বুয়েটের কাছ থেকে ১২ হাজার টাকায় মেশিন তৈরি করে নেয়। কিন্তু সেই মেশিনে ২০১৫ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিকল হয়ে পড়ে। ফলে বুয়েটের কাছ থেকে নেওয়া সকল মেশিন বাদ দিয়ে নতুন করে আরও উন্নতমানের ইভিএম প্রস্তুতের সিদ্ধান্ত নেয় কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশন। আর সেই সিদ্ধান্তের আলোকেই কে এম নূরুল হুদার বর্তমান কমিশন ২ লাখ টাকার দামের অধিক উন্নত মেশিন বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাজ থেকে তৈরি করে নিয়েছে।

বর্তমানে ইসির কাছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ইভিএম রয়েছে। বর্তমানে ইভিএমের দুটি ইউনিট। একটি কন্ট্রোল ইউনিট, আরেকটি ব্যালট ইউনিট। কন্ট্রোল ইউনিটে আঙুলের ছাপ মিললেই ব্যালট ইউনিটে সংশ্লিষ্ট ভোটারের ব্যালট পেপার ওপেন হয়। তারপর সেখানে পছন্দের প্রতীকে পাশে রাখা বোতামে চাপ দিয়ে ভোট দেওয়া সম্পন্ন করা হয়। যাদের আঙুলের ছাপ মেলে না, তারা প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সহায়তা নিয়ে ব্যালট ইউনিট ওপেন করে ভোট দিয়ে থাকেন।

আরও পড়ুন:
ইভিএম: আঙুলের ছাপ না মেলা যখন বড় সমস্যা
ইভিএমে ধীরগতি: টেকনিক্যাল কমিটির মত নিয়ে সিদ্ধান্ত

বাংলাদেশ সময়: ২০০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২
ইইউডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।