ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের ভাবনা

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২২
১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের ভাবনা

ঢাকা: আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) আলোচনা চলছে নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। নির্বাচন কমিশনার থেকে শুরু করে সংস্থাটির অনেকেই অর্ধেক আসনে এই ভোটযন্ত্র ব্যবহার করার পক্ষে।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, ১৫০ আসনের বেশি এই ভোটযন্ত্র ব্যবহার করার সক্ষমতা, লোকবল কিংবা মেশিন কোনোটাই নেই। এছাড়া ৩০০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করতে হলে এখনই নতুন করে আরও মেশিন কেনার প্রক্রিয়া হাতে নিতে হবে। কিন্তু সে উদ্যোগও নেই। সব রাজনৈতিক দলও পুরো নির্বাচন ইভিএমে চায় না। এক্ষেত্রে মাঝামাঝি একটা অবস্থানে থাকলেই বরং সুবিধা হতে পারে।

নির্বাচন কমিশনারদের মধ্য থেকেও কেউ কেউ মনে করছেন ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হলে একটা তুলনামূলক চিত্র পাওয়া যাবে। ভোটের হার, আইন-শৃঙ্খলা, ব্যয়, সহিংসতা ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে যে ইভিএম, নাকি ব্যালট পেপারের ভোটগ্রহণই অপেক্ষাকৃত ভাল। আর এই তুলনামূলক চিত্রের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে নির্বাচন কমিশন ১৬টি দল থেকে ইভিএম ব্যবহার না করার প্রস্তাব পেয়েছে। কেউ কেউ অর্ধেক আসনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য বলেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনেই ইভিএম চেয়েছে।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ইসির হাতে দেড় লাখ ইভিএম রয়েছে। এর মধ্যে কিছু ইভিএম চুরি হয়েছে। নষ্টও হয়েছে বেশ কিছু মেশিন। তাই দেড় লাখ ইভিএমও ব্যবহার করার মতো নেই সংস্থাটির হাতে। চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে তড়িঘড়ি করে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ৮০ হাজার মেশিন ও পরে ৭০ হাজার মেশিন সংগ্রহ করে কেএম নূরুল হুদার কমিশন। এরপর বিভিন্ন নির্বাচনে ব্যবহার করা হলে দীর্ঘদিন ভোটকেন্দ্রেই রাখা হয়। কিছু মেশিন উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে ও বিভিন্ন গোডাউনে রাখা হয়।

ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক সৈয়দ রাকিবুল হাসান এ বিষয়ে বলেছেন, ইভিএম যা আছে তাতে ৭০-৮০টি আসনে হয়তো নির্বাচন করতে পারব। আরও ইভিএম কেনা হবে কি-না, সেটা কমিশনের সিদ্ধান্ত। কমিশন সিদ্ধান্ত দিলেই বলা সম্ভব।

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ১৫০ আসনে ইভিএম হলেই ভাল হবে। কমিশনের কাছেও আমার এই প্রস্তাব থাকবে। তবে সিদ্ধান্তটি আসবে কমিশন বৈঠকে আলোচনার ভিত্তিতেই।

৩০০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করতে হলে আমাদের সক্ষমতা, প্রয়োজনীয় লোকবল ও অর্থের যোগান আছে কিনা, সেটি দেখতে হবে। এছাড়া যে আলোচনা আছে এতে অর্ধেক আসনে ইভিএমে ভোট হলে তুলনামূলক একটা চিত্র (ভাল-মন্দ) বেরিয়ে আসবে। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে।

বিএনপিসহ বেশ কিছু দল ইভিএম ব্যবহারের একেবারেই বিপক্ষে। তবে প্রযুক্তিবিদরা মনে করছেন, এই যন্ত্রটি নির্ভরযোগ্য মেশিন। এর মাধ্যমে দলগুলোর নির্বাচনে যাওয়া উচিত। শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এই প্রসঙ্গে বিএনপিসহ অন্যান্য দলগুলোর উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে ইভিএম যাচাইয়ের পর বলেছেন, এটি পারফেক্ট ও নির্ভরযোগ্য মেশিন। ভোট কারচুপি করার এখানে কোনো সুযোগ নেই। আমি রাজনৈতিক দলগুলোকে বলব, আপনারা যদি নতুন কমিশন তৈরি করতে পারেন, তখনো এই ইভিএম মেশিনটা ব্যবহার কইরেন। আপনাদেরই লাভ হবে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম কায়কোবাদ বলেছেন, ইভিএমের প্রতিটা ছোট ছোট অংশ যেভাবে কাস্টমাইজ করা হয়েছে, তো কেউ এসে এটাকে ম্যানিপুলেট করবে এটা সম্ভব নয়।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকল্পটির মেয়াদ শিগগিরই শেষ হচ্ছে। তিনশ কিংবা ১৫০ আসনে ভোটগ্রহণ করতে হলেও নতুন করে আরও মেশিন কিনতে হবে। এজন্য নতুন প্রকল্প হাতে নিতে হবে।

২০১০ সালে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন কমিশন দেশে ভোট ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে ইভিএমের সূচনা করে। সে সময় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে এই ভোটযন্ত্র তৈরি করে নেওয়া হয়েছিল।

কয়েক বছর ভালো ফল পাওয়া গেলেও ২০১৫ সালের রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের সময় একটি মেশিনে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। সেই মেশিনটি আর সারাতে পারেনি ইসি। এমনকি ত্রুটির কারণও উদ্ধার করতে পারেনি।

কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৬ সালে এমন পরিস্থিতে বুয়েটের তৈরি মেশিনগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নষ্ট করে ফেলে। একই সঙ্গে নতুন এবং উন্নতমানে ইভিএম তৈরির নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়।

সেই সিদ্ধান্তের আলোকে কেএম নূরুল হুদা কমিশন প্রায় ২০ গুণ বেশি দামে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে অধিকতর উন্নতমানের ইভিএম তৈরি করে নেয়। নতুন ইভিএম দিয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে প্রথম ভোট নিয়ে সফল হয় ইসি। এরপর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন (ছয়টি আসনে) ও অন্যান্য উপ-নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এই মেশিন ব্যবহার করা করে বিগত ইসি।

বর্তমানে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনও ইভিএমের ব্যবহার বাড়াতে চায়। এক্ষেত্রে তারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে চিন্তা-ভাবনা করছে। কিন্তু বড় পরিসরে এই মেশিন ব্যবহার করতে হলে কিনতে হবে আরও লক্ষাধিক নতুন মেশিন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২২
ইইউডি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।