ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন

আধুনিক সিলেট গড়তে বাবুলের ২১ দফা ইশতেহার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৩ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২৩
আধুনিক সিলেট গড়তে বাবুলের ২১ দফা ইশতেহার

সিলেট: সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।

রোববার (১৮ জুন) বিকেলে নগরের কুমারপাড়ায় লাঙ্গল প্রতীকের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে ইশতেহার ঘোষণার সময় আধুনিক সিলেট গড়ে তুলতে নিজের পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, যদি আমাকে যোগ্য মনে করেন, আমার কথাগুলো সত্য এবং উন্নয়ন ভাবনা মনে হয় সঠিক, তাহলে আগামী ২১ জুন লাঙ্গল মার্কায় ভোট দিয়ে নির্বাচিত করুন। আপনাদের আমানতের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে পারব এই আত্মবিশ্বাস আমার আছে।

বাবুলের ইশতেহার অনুযায়ী নির্বাচিত হলে তিনি নাগরিক, শিল্পবান্ধব, যানজটমুক্ত, পরিবেশবান্ধব, জলাবদ্ধতামুক্ত, সুপরিকল্পিত আবাসনের নগর হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেবেন। নগরভবনকে সবার জন্য ও দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানে রূপ দেবেন তিনি। নগরের উন্নয়নে নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ, বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে ৪২টি ওয়ার্ডে উন্নয়ন ও সন্ত্রাসবিরোধী নাগরিক কমিটি গঠন, সেবামূলক খাতগুলোকে আরও শক্তিশালী করণ ও এজন্য স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেবেন এ প্রার্থী।

ভূমিকম্প ও দুর্যোগ মোকাবিলায় সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভবন নির্মাণের অনুমতি প্রদানে যথাযথ নিয়ম মানা; নতুন ১৫টি ওয়ার্ডের পরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ; নগরের পানীয় জলের সমস্যা সমাধানে কার্যকর প্রকল্প গ্রহণ; বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট স্থাপন এবং বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা; অপচনশীল পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যের জন্য আলাদা প্ল্যান্ট স্থাপন করে রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে গৃহস্থালি পণ্য তৈরির ব্যবস্থাও করার ইচ্ছা জানিয়েছেন বাবুল। রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে তৈরি গৃহস্থালী পণ্য বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলেও তিনি জানান।

নগরের বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা দূরীকরণের নতুন ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন লাঙ্গল প্রার্থী। ছড়াখাল পুনঃখননের ব্যবস্থা, সুরমা নদী খননের ব্যাপারে সম্ভাব্যতা যাচাই করে সরকার যাতে উদ্যোগ নেয় সে পদক্ষেপ নেওয়া, প্রয়োজনে শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ, প্রবাসীদের জন্য অগ্রাধিকার দিয়ে আলাদা সেল, শিশুদের বিনোদনে পার্ক নির্মাণসহ এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও উল্লেখ করেন বাবুল।

তার ২১ দফা পরিকল্পনার মধ্যে আরও রয়েছে- দিঘীর নগরী সিলেটে অবৈধ দখলে থাকলে সেগুলো উদ্ধার, সিটি করপোরেশনের কর ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনা, অযৌক্তিক হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্মূল্যায়ন, একাধিক কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা, গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তির ব্যবস্থা করা, শিক্ষার অভাবে নগরে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করা ও তাদের পুনর্বাসন এবং কারিগরী শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করার উদ্যোগ নেওয়া।

সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে একটি আধুনিক পাঠাগার প্রতিষ্ঠা, এছাড়া ব্যক্তি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত পাঠাগার সমূহকে সবধরনের সহায়তা দেওয়া।

তিনি বলেন, সিলেট নগরে কর্মজীবী মায়েদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নেই। তাই তাদের সন্তানদের দেখাশুনার জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার চালু করা হবে। নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নারীদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টারের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া কর্মজীবী নারীদের স্বল্প খরচে থাকার সুবিধার্থে হোস্টেলের ব্যবস্থা করা হবে।

সিলেট রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শহরও। এই সম্প্রীতি সুরক্ষায় সিটি করপোরেশন দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবে। ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়া হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তা তুলে ধরার জন্য জাদুঘর ও আর্ট গ্যালারি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অভ্যন্তরে এ ধরণের একটি স্থাপনার কথা থাকলেও কার্যত তা করা হয়নি। এটা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।

সিলেটের পর্যটন ও সংস্কৃতির বিকাশে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, একটি সুপরিকল্পিত সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হবে। যেখানে নাট্যমঞ্চ, সিনেপ্লেক্সসহ সাংস্কৃতিক চর্চার সবধরণের সুবিধা থাকবে। পাশাপাশি পর্যটনের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে খেলাধুলার প্রসার ঘটাতে মাঠ করা হবে এবং নগরকে সবুজে আচ্ছাদিত করা হবে।

তিনি আরও বলেন, সিলেটে নিম্নবিত্ত ও বস্তিবাসী, শ্রমিকরা স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত। নির্বাচিত হলে শ্রমিকদের বিশেষায়িত হাসপাতাল করে নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে। বিভাগীয় শহর সিলেটে কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চাপ বাড়ছে। ফলে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সিলেট নগরকে একটি ডিজিটাল নগর হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। তরুণদের জন্য আইটি ক্ষেত্রে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে, যাতে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থান হয়। সিটি করপোরেশনকে সত্যিকারের সেবামূলক ও জনকল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করানো হবে। করপোরেশনে সবার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। নির্বাচিত হলে ১০০ দিনের একটি কর্মসূচি হাতে নেব এবং সবাইকে সঙ্গে নিয়ে নগর উন্নয়নে সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, আমার একটাই চাওয়া, ভোটাররা যেন সচেতন থাকেন। যেখানে অনিয়ম, পেশি শক্তির প্রদর্শন, অনৈতিক চর্চা দেখতে পাবেন, সেখানে প্রতিবাদ করবেন। নির্বাচন কমিশন যাতে নিরপেক্ষ থাকে, এক পক্ষের হয়ে কাজ না করে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন করে, সেদিকে নজর রাখতেও অনুরোধ জানান তিনি।

ইশতেহার ঘোষণার সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির নেতারা।

বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘণ্টা জুন ১৮, ২০২৩
এনইউ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।