ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

তাপস পাল: শিখরে ওঠা এক নায়কের নিঃসঙ্গ প্রয়াণ 

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০
তাপস পাল: শিখরে ওঠা এক নায়কের নিঃসঙ্গ প্রয়াণ 

শৈশব থেকেই অভিনয় করার ইচ্ছা পুষেছিলেন তাপস পাল। তার স্বপ্ন পূরণ করেন তরুণ মজুমদার। ১৯৮০ সালে ‘দাদার কীর্তি’ সিনেমার মধ্য দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে এই অভিনেতার। মাত্র ২২ বছর বয়সেই রুপালী পর্দায় নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পান তিনি।

প্রথম সিনেমায় সহশিল্পী হিসেবে অভিনেত্রী মহুয়া রায় চৌধুরী, সন্ধ্যা রায়, দেবশ্রী রায়, অভিনেতা অনুপ কুমারকে পান তাপস। পরবর্তীতে দেবশ্রী রায়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে বহু সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি।

এক সময়ে তাদের জুটির সিনেমা মানেই ছিল, বক্স অফিসে বড় সাফল্য। অভিনেতা তাপস পালসহজ ও সাবলীল চরিত্রে অভিনয় করে তাপস নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন অনন্য উচ্চতায়। ‘দাদার কীর্তি’ সিনেমার পর ‘সাহেব’-এও সাফল্য পান তিনি। পরিবারের নানা ধরনের টানাপড়েনের গল্পের সিনেমায় অনবদ্য ছিলেন এই নায়ক। রোমান্টিক সিনেমাতে তিনি তথাকথিত ধারা ভেঙেছেন।

১৯৮৫ সালে তরুণ মজুমদার পরিচালিত ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’ সিনেমাতে আবারও দেবশ্রী রায়ের সঙ্গে জুটি বাঁধেন তাপস পাল। রোমান্টিক গল্পের সিনেমাটি ব্যাপক সাফল্য পায়। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকে হয়নি। এ জুটি একে একে ‘অর্পণ’, ‘সুরের সাথী’, ‘সুরের আকাশে’, ‘নয়নমণি’, ‘চোখের আলোয়’, ‘তবু মনে রেখো’র মতো দর্শক নন্দিত সিনেমা উপহার দেন।

দেবশ্রীর পর শতাব্দীর সঙ্গে জুটি বাঁধেন তাপস। একসঙ্গে উপহার দেন ‘গুরুদক্ষিণা’র মতো কালজয়ী সিনেমা। এরপর একে একে ইন্দ্রাণী হালদার থেকে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অভিনেত্রীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন তিনি।

বলিউডের প্রখ্যাত অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিতের হিন্দি সিনেমায় অভিষেক ঘটে তাপসের বিপরীতে। ১৯৮৪ সালে হীরেন নাগের ‘অবোধ’ সিনেমায় তারা জুটি বেঁধে অভিনয় করেন। রাখী গুলজারের সঙ্গেও অভিনয় করতে দেখা গেছে  তাপসকে। সহশিল্পীদের সঙ্গে অভিনেতা তাপস পাল

২০১২ সালে দেবাদিত্যের ‘আটটা আটের বনগাঁ লোকাল’র মধ্য দিয়ে সর্বশেষ তাপস পালকে বড় পর্দায় দেখা যায়। তবে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘২ টাকা’-এ সর্বশেষ অভিনয় করেন তিনি। তার উল্লেখযোগ্য সিনেমার তালিকায় রয়েছে- ‘বৈদূর্য রহস্য’, ‘মায়া মমতা’, ‘সমাপ্তি’, ‘অনুরাগ’, ‘বাহাদুর’, ‘অনুরাগের ছোঁয়া’, ‘পথভোলা’, ‘কুরুক্ষেত্র’ ইত্যাদি।

অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতিতে নাম লেখান তাপস পাল। ২০০১ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের হাত ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। ওই বছর আলিপুর কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন এই অভিনেতা। এর পর ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হন তিনি। ২০১৪ সালেও ওই কেন্দ্র থেকে ফের জয়ী হন তাপস। রাজনীতির ময়দানে তাপস পাল

২০১৬ সালের শেষের দিকে রোজ ভ্যালি নামে একটি চিটফান্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। দীর্ঘ ১৩ মাস বন্দি থাকার পর ওড়িশার বিশেষ আদালত তাপসকে জামিন দেয়। বন্দি অবস্থাতে তাকে দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছিল।

হুগলি মহসিন কলেজ থেকে বায়ো-সায়েন্স নিয়ে স্নাতক উত্তীর্ণ করেন তাপস। ঘর বাঁধেন নন্দিনী পালের সঙ্গে। ছোটপর্দার কাজ করতেন তিনি। তাদের একমাত্র মেয়ে সোহিনী পাল। তিনিও সিনেমায় অভিনয় করেন। মেয়ে সোহিনীর সঙ্গে তাপস পাল‘সাহেব’ সিনেমার জন্য ১৯৮১ সালে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও পান তাপস। পশ্চিমবঙ্গ  সরকার ২০১২ সালে তাকে বিশেষ চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করে। এ ছাড়া তিনি কলাকার পুরস্কারও পান।

জীবনের শেষ দিনগুলো অসুস্থতায় কেটেছেন তাপস পালের। তবে সকল সমস্যা কাটিয়ে আবারও অভিনয়ে ফেরার আকুতি ছিলে তার। কিন্তু চাওয়াটা অপূর্ণ রেখেই মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বিদায় টলিউড ইন্ডাস্ট্রির একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০
জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।