মৌলভীবাজার: দিনের ব্যবধান চার কি পাঁচ! তার মাঝেই সর্পবিষয়ক ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে পুনরায় আরেকটি সর্প অর্থাৎ অজগর সাপ (Burmese Python) ধরা পড়লো। সেই সাপগুলোর থাকার কথা পাহাড়ি বনে।
চা এর রাজধানী শ্রীমঙ্গলের সীমানারেখা মাঝেই ১২৫০ হেক্টরের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। যে বনটির চিরসবুজ বন বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ চিরসবুজ বনেই রয়েছে ‘মহাবিপন্ন’, ‘বিপন্ন’ এবং ‘সংকটাপন্ন’ বন্যপ্রাণীদের বসবাস। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন), বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী অজগর দেশে ‘সংকটাপন্ন’ প্রজাতির প্রাণী।
‘নির্বিষ’ এই প্রাণীটির জীবনাচরণ পুরোপুরি বনকেন্দ্রীক। অর্থাৎ বনকে ঘিরেই তার থাকার কথা। বেড়ে উঠার কথা। খাদ্যের সন্ধানে বনেই বিচরণ করার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ক্রমাগতভাবে অজগর সাপ লাউয়াছড়া থেকে বের হয়ে লাউয়াছড়া সংলগ্ন শ্রীমঙ্গলের পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে চলে আসছে। এসে হাঁস, মুরগি বা অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণী খেতে গিয়ে ধরা পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) সকালে শ্রীমঙ্গলের কালাপুর এলাকার ভূইয়া বাড়ি থেকে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন একটি অজগর উদ্ধার করে। পরে সেটিকে বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, ৫ আগস্ট শ্রীমঙ্গল শহরের পূর্বাশা আবাসিক এলাকা থেকে ৬ ফুট দৈর্ঘ্যের ৮ কেজি ওজনের একটি অজগর সাপ উদ্ধার করা হয়েছিল। ২১ জুলাই ভাড়াউড়া চা বাগানের ফিনলে ডিভিশন হাসপাতালের ডা. সাদাত হোসেন মো. আসলামের বাংলোর আম গাছ থেকে বড় আকৃতির একটি অজগর সাপও উদ্ধার করা হয়েছিল। এরও আগে ৪ জুন মৌলভীবাজার রোডের ভান্ডারি মঞ্জিল নাম বাসা থেকে এবং ৩ জুন উত্তর ভাড়াউড়া কাকলি মাঠের পাশ থেকে আরেকটি অজগর উদ্ধার করে বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার সকালে উদ্ধার করা অজগর সাপ প্রসঙ্গে সাপ-উদ্ধারকারী এবং বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজল বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে কালাপুরের ভূইয়া বাড়িতে একটি অজগর সাপ মুরগি খেতে এসে রাতে কোনো এক সময় অজগর সাপটি সবজি ক্ষেতের জালে আটকে যায়। পরবর্তীতে ভোরে বাসার লোকজন সাপটিকে দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনকে খবর দিলে আমি সাপটিকে উদ্ধার করে বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছি।
প্রায়ই অজগর সাপসহ বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে এসে ধরা পড়েছে বলে সজল জানান।
শ্রীমঙ্গল শহরে ঘন ঘন অজগর সাপ প্রাপ্তির কারণ সম্পর্কে বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, শ্রীমঙ্গলের শহরের পাশেই লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। এই উদ্যানটির ব্যাপ্তি এক সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে ছিল। বন্যপ্রাণীরা এই বন থেকেই তাদের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যটুকু গ্রহণ করতে পারতো। কিন্তু যেভাবেই হোক, যে কারণেই হোক, লাউয়াছড়া বন আজ ক্রমশই সংকুচিত হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় খাদ্যটুকু তারা সেখান থেকে সংগ্রহ করতে পাচ্ছে না। ফলে বন্যপ্রাণীরা শহর সংলগ্ন গ্রামের গৃহপালিত প্রাণীর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে।
এছাড়াও লাউয়াছড়ায় মাত্রাতিরিক্তভাবে দৈনিক পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অজগরসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীরা তাদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানান এ বন্যপ্রাণী গবেষক।
বাংলাদেশ সময়: ০০১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২৩
বিবিবি/এএটি