সাতক্ষীরা: সুন্দরবনে গরানগাছ বেড়েছে দাবি করে পূর্ব-পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা ও খুলনা রেঞ্জে সীমিত পরিসরে গরান কাঠ কাটার অনুমতি চেয়েছেন স্থানীয় বাওয়ালিরা।
তাদের দাবি, গরান কাঠ না কাটায় বনের গরানসমৃদ্ধ এলাকায় অন্য গাছের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বাওয়ালি আব্দুল হাই বলেন, আমরা সুন্দরবনের নোটাবেকি, গেওয়াখালী, পুষ্পকাটি, আগুনজালা, দোবেকি, নোটাবেঁকি, কেওড়াসুতি, মরগখালী, চালকি, হংসরাজ, নীলকোমল এলাকায় গরান দেখেছি প্রচুর। আগে বনে এত গরানের ঝাড় ছিল না। এখন গরান কাটার অনুমতি দিলে বনের কোনো ক্ষতি হবে না বরং বনের অন্যান্য গাছ বাড়বে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সত্তর দশক থেকে সুন্দরবনে গরান, গোলপাতা, হেতাল, গেওয়া, সুন্দরী কাঠ কাটার অনুমতি দিত বন বিভাগ। নব্বইয়ের দশকে শুধু গরান ও গোলপাতা কাটার অনুমতি দেওয়া শুরু হয়। এরপর ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর সুন্দরবনে আঘাত হানার পর ওই বছর সরকার গরান ও গোলপাতা কাটা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এর দুই বছর পর গোলপাতা কাটার অনুমতি দেওয়া হলেও গরান কাটার অনুমতি আর চালু করেনি বন বিভাগ।
পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা এম. হাবিবুল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর ধরে বাওয়ালিরা গরান কাটার অনুমতি চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করে আসছেন। তবে গরানের অনুমতির বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের বিষয়। নির্দেশনা না পেলে গরানের গাছ লাগানোর অনুমতি দেওয়া সম্ভব হবে না।
এদিকে শনিবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে পূর্ব-পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা ও খুলনা রেঞ্জে সীমিত পরিসরে গরান কাঠ কাটার অনুমতি চেয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল বাওয়ালিরা। এ সময় সুন্দরবন বনজীবী ব্যবসায়ী বাওয়ালি ও মালিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক বদরুজ্জামান লিখিত বক্তব্যে গরান কাটার দাবি তুলে ধরেন।
এ সময় লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গরান কাঠ আহরণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের স্টেশন কর্মকর্তারা সীমিত পরিসরে গরান কাঠ আহরণ সম্ভব মর্মে প্রতিবেদন দেন।
তৎকালীন খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন খুলনা বিভাগের ২ রেঞ্জ থেকে ৫০ হাজার মণ গরান আহরণের স্বপক্ষে মতামত দিয়ে প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দেন।
এতে বলা হয়, সুন্দরবনে ব্যাপক হারে গরান বৃদ্ধি পাওয়ায় সুন্দরী, বাইন, ধুন্দল, পশুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ বংশবৃদ্ধি করতে পারছে না।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুন্দরবন বনজীবী ব্যবসায়ী বাওয়ালি মালিক ফেডারেশনের সভাপতি কামরুজ্জামান বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলি, বাওয়ালি আব্দুল হাই, নুর মোহাম্মদ, সিরাজুল ইসলাম, মফিদুল ইসলাম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২২২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২৫
এএটি