মাগুরা: হাড়ি ও বাক্স থেকে বের হয়ে আসা খৈয়া গোখরা, পদ্ম গোখরা, কাল কেউটেসহ ভয়ঙ্কর সব বিষধর সাপ নিয়ে নানা মন্ত্র ও হাতের কসরতের মাধ্যমে খেলা দেখালেন সাপুড়েরা ।
জিহ্বাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফণাতোলা বিষধর সাপের দংশন নিয়ে তাক লাগিয়ে দিলেন দর্শকদের।
এভাবেই ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও হাজারও দর্শকের উপস্থিতিতে মাগুরা সদর উপজেলার হাজরাপুর ইউনিয়নে শুক্রবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গ্রাম বাংলার ঐহিত্যবাহী ঝাপান বা সাপ খেলা প্রতিযোগিতা।
প্রতিযোগিতায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সর্বমোট ১১ জন সাপুড়ে কমপক্ষে ২শ সাপ নিয়ে খেলা দেখান।
হাজরাপুর ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয় হাজরাপুর রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আয়োজনে এ ঝাপান খেলা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিযোগিতায় মোট ১১ জন সাপুড়ে অংশগ্রহণ করেন। তারা হলেন- নজীর সরকার, লিটন সরকার, স্বপন দেওয়ান, খোকন সরকার, সরফরাজ দেওয়ান, নূর মহম্মদ, আ. রহমান, রাশিদুল ইসলাম, শাহিন রহমান, সোহেল মিয়া ও অপু দেওয়ান।
প্রতিযোগিতায় এদের মধ্যে ঝিনাইদহের চণ্ডিপুরের খোকন সরকার প্রথম, শ্রীপুরের রাশিদুল ইসলাম দ্বিতীয় ও ঝিনাইদহের চাঁনপুরের লিটন সরকার ৩য় স্থান অধিকার করেন।
স্থানীয় যুবক রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, “যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশে সাপের খেলা বা ঝাপান খেলা চলে আসছে। এটি আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির একটি ঐতিহ্যবাহী অংশ। কিন্তু বর্তমানে মানুষের ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে এ খেলাগুলো বিলীন হতে বসেছে। এ কারণে আমরা স্থানীয়ভাবে এ ঝাপান খেলার আয়োজন করেছি। বিনোদনপ্রিয় মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি আমাদের আগামীতেও এ ধরনের খেলার আয়োজন করায় উৎসাহিত করছে। ”
হাজরাপুর গ্রামের গৃহবধূ মনিরা পারভীন বাংলানিউজকে বলেন, “ছোটবেলায় রাস্তার পাশে সাপের খেলা দেখতাম। কিন্তু এখন তা আর তেমন চোখে পড়ে না। এখানে এই ঝাপান খেলায় প্রায় ২শ সাপ নিয়ে সাপুড়েরা খেলা দেখাচ্ছেন। এক জায়গায় এত সাপের উপস্থিতি ও বৈচিত্র্যপূর্ণ খেলা দেখা সাধারণত সম্ভব হয় না। তাই, সমস্যা থাকলেও বাড়ির অন্যান্য মেয়েদের নিয়ে ঝাপান খেলা দেখতে এসেছি। ”
স্থানীয় হাজরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, “এলাকার মানুষের নির্মল চিত্ত বিনোদনের উদ্দেশ্যে ঐতিহ্যবাহী এ ঝাপান খেলার আয়োজন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে এলাকার মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি করা আমাদের উদ্দেশ্য। ”
এ ধরনের খেলার আয়োজনের মাধ্যমে গ্রামীণ ঐতিহ্য রক্ষায় সবাই এগিয়ে আসবেন, এ আশাই করছেন সাপুড়ে, এলাকাবাসী ও আয়োজক ব্যক্তিরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১২
সম্পাদনা: প্রভাষ চৌধুরী, নিউজরুম এডিটর