ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

কৃষির উপকারী কোলা ব্যাঙ বিপন্ন

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, এনভায়রনমেন্ট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৪ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৬
কৃষির উপকারী কোলা ব্যাঙ বিপন্ন ছবি: কামরুজ্জামান বাবু - বাংলানিউজটোয়েন্টিফর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): ফসলের জমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার, কীটনাশক ব্যবহারের ফলে বিপন্ন হয়ে পড়ছে মাটির উর্বরতা। শুধু তা-ই নয়, এর ফলে চরম হুমকির মুখে পড়ছে কৃষিবান্ধব প্রাণীকূল।

বাংলার পথে-প্রান্তরে ছড়িয়ে থাকা এ সব প্রাণীর তালিকায় স্থান পাওয়া অন্যতম কৃষি উপকারী প্রাণী কোলা ব্যাঙ।
 
ব্যাপক কীটনাশক ব্যবহার এবং বন-জঙ্গল উজার করায় জীববৈচিত্র্য রক্ষাকারী ব্যাঙের দিন ফুরিয়ে আসছে। প্রতিনিয়তই নষ্ট হচ্ছে এদের বাসস্থান ও প্রজনন-আশ্রয়গুলো। ফলে দিন দিন বিলুপ্তির পথে এগিয়ে চলেছে কোলা ব্যাঙসহ নানান প্রজাতির কৃষি উপকারী ব্যাঙ। অনেক জীবজন্তু এবং পাখির খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত কোলা ব্যাঙ। যা খাদ্য-শৃঙ্খলের সহায়ক হয়ে জীবজগতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

কোলা ব্যাঙ নিশাচর প্রাণী। সাধারণত এরা একা থাকতে পছন্দ করে। বাংলাদেশের সর্বত্র কোলা ব্যাঙ দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও ভারত, নেপাল, মায়ানমার, পাকিস্তানের সিন্ধু উপত্যকায় ও আফগানিস্তান পর্যন্ত রয়েছে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ বা আইইউসিএন এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।

বন্যপ্রাণি সংরক্ষক ও আলোকচিত্রী কামরুজ্জামান বাবু বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর কীটতত্ত্ব বিভাগের গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন তথ্যে দেখা যায় ধানের প্রধান প্রধান ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণে বোরো মৌসুমে ১৩ শতাংশ, আউশ মৌসুমে ২৪ শতাংশ এবং আমন মৌসুমে ১৮ শতাংশ ভাগ ফলন কম হয়।

তিনি আরও বলেন, সেই গবেষণাতে আরও দেখা গেছে জমিতে সোনা ব্যাঙ ক্ষতিকর পোকামাকড় শতকরা ১৬-৪১ ভাগ কমিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। এইভাবে যদি সব ফসলের তথ্য পাওয়া যায় তাহলে দেখা যাবে, কোলা ব্যাঙ কৃষি ফসলের উৎপাদনে কতটা অবধান রাখছে। এছাড়াও মশা ও মাছি ভক্ষণ করে মশা ও মাছি বাহিত বিভিন্ন রোগ যেমন- Malaria, Dengue, Typhoid,  Anthrax প্রভৃতির মতো অনেক রোগ প্রতিরোধ করে কোলা ব্যাঙ।

কোলা ব্যাঙের পরিচিতি ও খাদ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, কোলা ব্যাঙ অনেক স্থানে সোনা ব্যাঙ বা ভাউয়া ব্যাঙ নামে পরিচিত। ইংরেজি নাম Asian Bull Frog এবং বৈজ্ঞানিক নাম  Hoplobatrachua tigerinus। এটি Dicroglossidae পরিবারের ও Hoplobatrachus গণের অন্তর্ভুক্ত উভচর প্রাণী। বিভিন্ন আকারের ফড়িং, পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ এদের খাদ্য। এরা দীর্ঘ সময় ধরে জলে থাকতে পারে না। ডাঙায় খাদ্যের সন্ধানে সময় কাটায়।

এর শারীরিক গঠন সম্পর্কে তিনি বলেন, কোলা ব্যাঙ আমাদের দেশের সর্ববৃহৎ ব্যাঙ ও মেরুদণ্ডী প্রাণী। আকারে ৬৫-১৩৪ মিলিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এদের গায়ের রঙ মূলত সবুজাভ, হালকা বাদামি বা হলুদাভ রঙের। স্ত্রী ও পুরুষ সোনা ব্যাঙ উভয়ের হলদে সোনালি রঙের একটি পৃষ্ঠীয় দাগ মুখ থেকে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত। তাদের মুখ সুচালো। স্ত্রী ব্যাঙরা সব ঋতুতে হালকা ধূসর রঙের হয়ে থাকে। পুরুষ ব্যাঙের চোয়ালের দু’ধারে কালো বর্ণের স্বরথলি আছে, যা স্ত্রী ব্যাঙের নেই। পুরুষ ব্যাঙের হাত-পায়ের আঙুল ও কব্জি মোটা হয় অপরদিকে স্ত্রী ব্যাঙের সরু হয়।
কোলা ব্যাঙের প্রজনন সম্পর্কে কামরুজ্জামান বাবু বলেন, বর্ষা শুরু হলে পুরুষ ব্যাঙ স্ত্রী ব্যাঙটিকে আকর্ষণ করতে গলা ফুলিয়ে ডাকতে থাকে। এই সময় পুরুষ ব্যাঙ অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। পুরুষ ব্যাঙের দেহের রঙ উজ্জ্বল হয় আর স্বরথলি উজ্জ্বল নীলাভ রঙ ধারণ করে। পুরুষ ব্যাঙটি স্ত্রী ব্যাঙটিকে আঁকড়ে ধরে দু’তিন ঘণ্টা পানিতে ভাসতে থাকে। এরপর স্ত্রী ব্যাঙ ডিম্বাণু ছাড়ে আর পুরুষ ব্যাঙ শুক্রাণু ছাড়ে।

তিনি আরও বলেন, এদের বহির্নিষেকক্রিয়ার মাধ্যমে প্রজনন ঘটিয়ে ডিম পারে। অর্থাৎ এদের শুক্রাণু ও ডিম্বাণু বাহিরে মিলিত হয়। ডিমগুলো ফিতার মতো পানিতে ভাসতে থাকে। ২৪ ঘণ্টা পর ডিম থেকে ফুটে বেঙাচি বের হয়। প্রায় ৩৫-৪০ দিনের ভিতরে বেঙাচি পূর্ণাঙ্গ ব্যাঙে রূপান্তরিত হয়। একটি স্ত্রী ব্যাঙ প্রাকৃতিক অবস্থায় এক সাথে প্রায় তিন থেকে দশ হাজার ডিম্বাণু ছাড়ে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৩ ঘণ্টা, ৬ মে, ২০১৬
বিবিবি/এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।