ক্ষেতের সীমানায় পোঁতা একটি চিকন কঞ্চি। দূর থেকে খালি চোখে দেখা মুশকিল।
পাখিটির নাম দাগি ঘাসপাখি। বাদামি ধূসর পালকে কালো লম্বা দাগকাটা এদের। ঘাস এদের প্রিয় স্থান। বাসাও বাঁধে ঘাসের মধ্যে। কঞ্চিতে পায়ের চিকন আঙুল দিয়ে অত্যস্ত সাবলীলভাবে বসে লেজ নাচিয়ে ডাকছিল সে। তবে আশপাশে কোনো সঙ্গীর খোঁজ পাওয়া গেলো না। ডাকের যেন বিরাম নেই তার। আস্তে আস্তে কোনো শব্দ না করে ঘাসে পা টিপে কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টাও সফল হলো শেষতক। ঘাস-মাটির রং হওয়ায় এদের দেখতে পাওয়া কঠিন।
তার ২০ হাত দূরত্বের মধ্যে গেলেও কোনো ভাবান্তর দেখা গেলো না। কখনো ডাকছিল, কখনো পালকে মাথা গুঁজে করছিল ‘রিল্যাক্স’। আকারে ছোট হলেও গলায় জোর কিন্তু কম নয়। বেশ চড়া গলায় ডাকতে ওস্তাদ এরা।
এটি নিয়ে কথা প্রসঙ্গে পাখি ও বন্যপ্রাণী গবেষক তানিয়া খান বলেন, দাগি ঘাসপাখি স্থানীয় দেশি পাখি। এরা মাটিতে ঘাসে বাসা বাঁধে। হাওরাঞ্চলে বেশি দেখা যায়। বৃহত্তর সিলেট ও চট্টগ্রামে দেখা গেলেও দেশের অন্য এলাকায় বেশ কম। বাইক্কা বিলে এদের পাওয়া যায়।
দাগি ঘাসপাখি লম্বা ঘাস, নলখাগড়া বনে সাধারণত থাকে। বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে। বাসার কাছাকাছি পানির উৎস থাকে। তবে বর্ষার সময় এরা অন্যত্র চলে যায়। পোকামাকড় ও মাকড়সা এদের পছন্দের খাবার। অগ্রহায়ণ, শীত ও বসন্তে ঘাস জেগে থাকে বলে এদের এসময় বেশি দেখা যায়। ইংরেজিতে এদের বলে Grass bird. পাখি গবেষক ইনাম আল হকের লেখনীতে পাওয়া যায়, পাখিটি ছোট জাতের। তবে লেজসহ এদের দৈর্ঘ্য একফুট। ওজন হয় ৫০ গ্রাম। ঘাসের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করলেও এরা কিছুক্ষণ পর পর চড়া গলায় ডেকে উড়ে বেড়ায়। হিমালয়ের দক্ষিণের সমতলের জায়গাগুলোতে এদের দেখা যায়। কিন্তু ক্রমে আবাস সংকটে কমে যাচ্ছে এ পাখির।
আরও পড়ুন
** দেশি পাখি দেখতে হাল্লার হাকালুকি
** বাইক্কা বিলের অ্যাক্রোবেট বেগুনি কালেম
** ‘বজ্জাত’ হরিণ ভাগিয়ে দিলো বনমোরগ
** যতো শীত ততো পাখি বাইক্কা বিলে
** বদলে গেছে পারাবত, বদলাননি যাত্রীরা
**হিজল বনে সাপ-পাখি শিকারি ‘শিকরে প্যাঁচা’
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৭
এএ/এইচএ/