গভীর জঙ্গলে যে গাছটি একসময় সবার নিভৃতে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ছিল আজ সে নিজকে ফলভারে সমৃদ্ধ করে তুলেছে।
পাহাড়ের প্রস্ফুটিত যেকোনো ফুল বা ফল এভাবেই প্রাকৃতিক আর্শীবাদ হয়ে ধরা পড়ে বিপন্ন প্রাণীদের জন্য।
পাহাড়-জঙ্গলে জন্মে বলে এর নাম ‘পাহাড়ি কলার ফুল’। এ ফুলটিকে‘কলার মোচা’ বলা হয়। এটি কেবলমাত্র পাহাড়েই জন্মে। সাধারণ কলার ফুলের মতো দেখতে। তবে কিছুটা লম্বাটে। সবজি হিসেবে খেতেও খুব সুস্বাদু।
বন-জঙ্গল উজার হওয়ায় প্রকৃতি থেকে হারাতে বসেছে পাহাড়ি কলা। আগের মতো এখন আর পাওয়া যায় না। চা শ্রমিকরাই খোদ এখন আর এই কলাটিকে পাহাড়ে দেখতে পান না বলে জানিয়েছেন।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে শ্রীমঙ্গল উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা টিপরাছড়া চা বাগানে গিয়ে বিরল এই পাহাড়ি ফুলের দেখা মেলে।
চা শ্রমিক সুনীল চাষা পাহাড় থেকে খাবার জন্য কেটে নিয়ে এসেছিলেন।
তিনি বাংলনিউজকে বলেন, ‘এগুলোকে আমরা পাহাড়ি কলার থুর বলি। আগে আমাদের বন-জঙ্গলে প্রচুর পরিমাণে এগুলো মিলতো। এখন একেবারেই পাওয়া যায় না। অনেক কষ্টে এই চারটি পেয়েছি। আমরা তরকারি হিসেবে রান্না করে খাই। খেতে খুবই স্বাদ। ’
আক্ষেপের সঙ্গে সুনীল বলেন, বন-জঙ্গল তো শেষ হয়ে গেছে বাবু। আমরা টিলা এলাকায় থাকি বলে পাহাড়ের উপর নির্ভর করে আমাদের টিকে থাকতে হয়। পাহাড় ধ্বংস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নানান সুস্বাদু পাহাড়ি ফলও ধ্বংস হয়ে গেছে।
সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইসিজিআইএস) এর উদ্ভিদ ও পাখি বিশেষজ্ঞ সৌরভ মাহমুদ বাংলনিউজকে বলেন, এটি পাহাড়ি কলা বা রাম কলার মোচা বলা হয়।
এর ইংরেজি নাম Bronze Banana এবং বৈজ্ঞানিক নাম Musa ornata। পাহাড়ি বন ধ্বংস ও পাহাড় কেটে আনারস, লেবু, রাবার প্রভৃতি বাগান করার ফলে এই পাহাড়ি ফলটি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। সিলেট এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বনগুলো এদের দেখা যায়। তাও সহজে যে দেখা যাবে তা নয়; এক কিলোমিটার বা দুই কিলোমিটার হাঁটলে তারপর হয়তো দেখা যায় এদের।
কলার ফুল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবারে সমৃদ্ধ বলে ডায়রিয়া ও আমাশয় নিরাময়ে সাহায্য করে।
এছাড়া এটি ডায়াবেটিস এবং পিরিয়ডের সময়ের অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ নিরাময়ে সাহায্যকরণের উল্লেখযোগ্য ঔষধিগুণ।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৭
বিবিবি/এএটি/বিএস