সময় গড়াচ্ছে দুপুরের দিকে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের রেল লাইন ধরে অগ্রসর হচ্ছি।
প্রায় দেড় কিলোমিটারের অমসৃণ পথে সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলতে হচ্ছে। তবুও দৃষ্টি বনের খণ্ড খণ্ড ঝোঁপঝাড়ের দিকে। হঠাৎ কালো রঙের একটি অংশ সামনে এগিয়ে এলো। মাত্র ৫ সেকেন্ডের মধ্যেই জানা হয়ে গেল একটি ব্যতিক্রমী এক প্রজাপতি। তখনও তার নামটি জানা হয়নি।
তবে সে প্রায় দশ গজ দূরে গিয়ে বসলো। শরীরের পুরো অংশজুড়ে কালো রঙের অধিক্য বলে দূর থেকে চোখকে সহজেই আকর্ষণ করে থাকে। অল্প সময়ের জন্য দেখা দিয়ে আবার কোথায় যে পালিয়ে গেল – খুঁজে পাওয়া গেলো না।
প্রজাপতি গবেষক অমিত কুমার নিয়োগী বাংলানিউজকে বলেন, এর বাংলা নাম মণিমালা। এটি বিরল প্রজাতির প্রজাপতি। এর ইংরেজি নাম Popinjay এবং বৈজ্ঞানিক নাম Stibochiona nicea। নিম্ফালিডি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এই অপরূপ সুন্দর প্রজাপতিটির ডানার ব্যাস প্রায় ৫০ থেকে ৬০ মিলিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
তিনি আরো বলেন, পুরুষ ও নারী উভয়েরই ডানার ওপরের রঙ ঘন মকমলে কালো। পুরুষ কিছুটা উজ্জ্বল বর্ণের হয় স্ত্রী এর তুলনায়। সম্মুখ ডানার উপর দিকের সেল অংশে নীল বর্ণের তিনটি করে তীর্যক দাগ রয়েছে। এছাড়া সম্মুখ ও পশ্চাৎ ডানার উপ-প্রান্তিক অংশতে নিলভ সাদাটে রঙয়ের মণি আকৃতির সারিবদ্ধ দাগ রয়েছে যা ক্রমান্বয়ে পশ্চাৎ ডানায় গাঢ় হয়েছে।
প্রাপ্তিস্থান ও জীবনযাপন সম্পর্কে তিনি বলেন, মণিমালা আমাদের দেশের সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে কয়েকটি বিশেষ স্থানে দেখা যায়। এরা সাধারণত উঁচু গাছে বিশ্রাম নেয়। এরা মাঝে মাঝে বনের নিচু গাছগুলোতে এসে ডানা প্রসারিত করে রোদ পোহায়। এরা অন্য প্রজাতির প্রজাপতির সঙ্গে প্রয়াশই স্থানিক যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এরা পঁচা বস্তু, পাথুরে ছড়া বা ছড়ার ভেজা বালু থেকে এদের জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান গ্রহণ করে। ফুল থেকে নেকটার নিতে এদেরকে খুব একটা দেখা যায় না। এরা Urticaceae গোত্রের গাছে ডিম পাড়ে যদিও সঠিক তথ্য এখনও আজানা।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এর লাল তালিকা-২০১৫ তে মণিমালাকে বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ (VU) হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান প্রজাপতি গবেষক অমিত কুমার নিয়োগী।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা এপ্রিল ২২, ২০১৭
বিবিবি/বিএস