বন পরিভ্রমণকারীরা পাখির ডাক শুনে শুনে তরতাজা বুনোগন্ধের সঙ্গে এগিয়ে যান সুদূরে।
গাছের ডালে ডালে সুমিষ্ট ধ্বনি ছড়িয়ে গানের পাখিরা উদাত্ত কণ্ঠে বলে যায় প্রাকৃতিক সজীবতার কথা।
বনের আরণ্যক পরিবেশে সারাদিন ধরে ডেকে যাওয়া একটি পাখির নাম শামা। কেউ কেউ আবার ‘শ্যামা’ও লিখে থাকেন। এর ইংরেজি নাম White-rumped Shama। ২৫ সেন্টিমিটারের পাখি। গান গেয়ে আপন এলাকাটি বরাবরই সুরক্ষিত রাখে শামা।
শামার লেজটি লম্বা, কোমর সাদা এবং পেটের রঙ লাল। পাখিটিকে চেনার সহজ পদ্ধতি হলো, এ তিনটি বিষয় মনে রাখা।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশের যেকোনো বনে প্রবেশ করলেই যে পাখিটির ডাক শোনা যায়, তার নাম শামা। মধুপুরের শালবনই হোক কিংবা শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া বনই হোক- সব বনেই সে আছে। বনকে ছোট ছোট নিজস্ব এলাকায় ভাগ করে নিয়ে গানের মাধ্যমে সে তার এলাকাকে রক্ষা করে। যতোদূর পর্যন্ত শামার গান শোনা যায়, ততোদূর পর্যন্ত তারই এলাকা। এ এলাকার বাইরে অন্য পাখিরা থাকে’।
তিনি আরো বলেন, ‘লাউয়াছড়ার নির্জন বনের পথ ধরে হাঁটলে ক্রমান্বয়ে কয়েকটি শামা পাখির ডাক শোনা যায়। যেহেতু ওদের গানই হলো এলাকা রক্ষার উপায়, সেজন্য ওরা গাইতেও থাকে সারাক্ষণ। গান দিয়েই প্রকাশ করে থাকে, এটি আমার এলাকা। শামার নিজস্ব সীমানার চারপাশে তাই দিনভর অনেক বেশি গান প্রতিধ্বনিত হয়’।
‘ওরা সারাদিন গান করে বেড়ায়। তবে আধা কিলোমিটার দূর থেকে শোনা কোকিলের মতো উদার কণ্ঠে চিৎকার করে গান করে না। সে মৃদু স্বরে এবং খুবই মিষ্টি কণ্ঠে গান গায়’।
ইনাম আল হক বলেন, ‘পৃথিবীতে শামা পাখির একাধিক প্রজাতি রয়েছে। তাই আমরা অন্য শামাদের থেকে আলাদা করে এ পাখিটির নামকরণ করেছি ‘ধলাকোমর-শামা’ (White-rumped Shama)। তবে আমাদের বাংলাদেশে যেহেতু একটি মাত্র প্রজাতি রয়েছে, তাই তাকে ‘শামা’ নামেই বলা যেতে পারে। তাতে কোনো অসুবিধে নেই’।
‘আমাদের জাতীয় পাখি ‘দোয়েল’ ও ‘শ্যামা’ খুবই ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। পাখি বিষয়ক বই-পুস্তকে সব সময় এ দুই পাখিকে পাশাপাশি খুঁজে পাওয়া যায়। এরা একই গণের পাখি’- বলেন পাখি বিজ্ঞানী ইনাম আল হক।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৭
বিবিবি/এএসআর