এছাড়াও জলবায়ুর পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ, বন-জঙ্গল উজাড়, কীটনাশকের ব্যবহারসহ নানা কারণে পৃথিবীব্যাপী উভচর প্রাণীর এ নিরীহ বন্ধুরা মারাত্মক হুমকিতে। আশঙ্কাজনক হারে বিপন্ন হয়ে যাওয়া এ প্রজাতির কচ্ছপের নামÑ ‘হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপ’।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ বা আইইউসিএন ‘লাল তালিকাভুক্ত’ করেছে এ প্রাণীটি। এরা ডাঙায় চলাফেরা করে বলে পাহাড়ি এলাকার মানুষ এবং চা বাগান সংলগ্ন জনগোষ্ঠীরা ভ্রান্ত ধারণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এদের ধরে খেয়ে ফেলেন। ওইসব মানুষদের মধ্যে একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে, এই কচ্ছপের মাংসসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ উপকারী।
বাংলাদেশের প্রখ্যাত বন্যপ্রাণী গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান বাংলানিউজকে বলেন, এরা মূলত ডাঙার কচ্ছপ। অন্য যেসব কচ্ছপ আমরা পানিতে দেখি তারা ডাঙায় বেশি সময় থাকে না। কিন্তু এ কচ্ছপটি ডাঙাতেই বেশি সময় থাকে। ফলে খুব সহজেই মানুষের নজরে আসে। এভাবেই এদের সংখ্যা অনেক কমে গেছে।
তিনি আরও বলেন, বন্যপ্রাণী আইনে তো সব বন্যপ্রাণী মারাই নিষিদ্ধ। কিন্তু হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপের মতো যে বন্যপ্রাণীগুলো বিপন্ন তালিকাভুক্ত রয়েছে তাদের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবার আরও কঠোর হওয়ার প্রয়োজন। সেই সঙ্গে এ প্রাণীগুলো সংরক্ষণে চিরসবুজ বনের আশপাশে বসবাসরত মানুষকে আরও সচেতন করা দরকার।
প্রাপ্তিস্থান সম্পর্কে ড. মনিরুল বলেন, বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের মিশ্র চিরসবুজ বন বা এর আশপাশেই এদের বসবাস। এরা আকারে ৩৩ সেন্টিমিটার এবং ওজনে প্রায় ৩ কেজি হয়। এরা মূলত নিরামিষভোজী। বিভিন্ন পাতা, সবুজ কচি ঘাস, ফুল, ফল ও ব্যাঙের ছাতা খায়। বাংলাদেশে ছাড়াও ভারত, নেপাল ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এদের পাওয়া যায়।
সরীসৃপ গবেষক শাহরীয়ার সিজার রহমান বলেন, হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপ খুবই বিরল প্রজাতির প্রাণী। এদের সারা শরীর জুড়ে হলুদ রঙের মধ্যে কালো কালো ছাপ রয়েছে। এরা ঘন বন, দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল, ঝোপঝাড় ও ছড়ার আশপাশে থাকে। এরা সাধারণত একাই বিচরণ করে। প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী ও পুরুষ একত্রে থাকে। এসময় পুরুষ ও স্ত্রী হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপের মাথা এবং মুখের আশপাশে লালচে রং ফুটে ওঠে। মে থেকে অক্টোবর এদের প্রজনন কাল।
তিনি আরও বলেন, এরা সাধারণত বর্ষা মৌসুমে ২টা থেকে ৯টা ডিম পাড়ে। এরা মুরগির মতো ডিমে তা দেয় না। মাটিতে গর্ত করে ডিমগুলোকে ঢেকে রেখে চলে আসে। ৩ থেকে সাড়ে ৫ মাস পর ছানা বের হয়। বাচ্চাগুলো ৫ থেকে ৭ সেন্টিমিটার হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২১ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৭
বিবিবি/এএ