তাই, অন্য মাছরাঙ্গার মতো তাকে নদী, হাওর-বিল বা পুকুরের ধারে কখনোই খুঁজে পাওয়া যাবে না। নির্জন বনপথের আধো শুকিয়ে যাওয়া ছড়াকে ঘিরেই সে দিব্যি টিকে আছে।
ছোট দু’একটি মাছ, ব্যাঙাচি, কাঁকড়া, শামুক কিংবা পোকামাকড় ইত্যাদিই তার জীবনধারণের খাবার-দাবার। বছরের গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশে আসা ছানা ফুটানোর জন্য। মাঝে মাঝে তীক্ষ্ম স্বরের ‘চিচিচি’ ধ্বনিতে মুখরিত করে রাখে পাহাড়ি জলধারা।
এই ‘বুনো মাছরাঙ্গা’র অপর নাম ‘উদয়ী-বামনরাঙ্গা’। ইংরেজি নাম Oriental Dwarf Kingfisher এবং বৈজ্ঞানিক নাম Ceyx erithaca। এটি আমাদের দেশের অনিয়মিত পাখি। সচরাচর দেখা যায় না এই মাছ-শিকারি পাখিটিকে।
আকার-আকৃতিতে এরা মাত্র ১৪ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। আমাদের চিরচেনা চড়ুই পাখির চেয়েও ছোট। ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ফিলিপাইনসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
‘গ্রীষ্মকালে পাহাড়ি বনের ছড়ার ধারে দাঁড়ালে কপাল যদি ভালো থাকে তবে হয়তোবা হঠাৎ দেখতে পাবেন কী যেন একটা আগুন রঙের বস্তু আপনার সমনে দিয়ে দ্রুতবেগে ছুটে গেলো। এটা যে বিশেষ এক প্রজাতির পাখি তা সহজে বুঝতে পারা যায় না। ’
গ্রীষ্মকালীন পরিযায়ী পাখি ‘উদয়ী-বামনরাঙা’ সম্পর্কে এভাবেই বর্ণনা দেন বন্যপ্রাণী গবেষক তানিয়া খান।
তানিয়া খান বাংলানিউজকে আরো বলেন, সিলেট এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়িতে বনের পাহাড়ি ছড়ার পাশে এদের মাঝে মাঝে দেখা যায়। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এই সময়টি এদের প্রজনন মৌসুম। পাহাড়ি মাটিতে গর্ত করে ছানা ফুটায়। পাহাড়ি ছড়ার পাশে খাড়া পাহাড়ে গর্ত খুড়ে বাসা বানায় তারা।
এর মাথার চাঁদি, ঘাড় কমলা এবং পেট কমলা-হলুদ। কালচে নীল রঙে ছড়ানো সৌন্দর্য রয়েছে পিঠ, কাধ-ঢাকনি, ডানা-ঢাকনি এবং ডানার পালক-ঢাকনি। ঠোঁট কমলা-হলুদ। পুরুষ এবং স্ত্রী পাখি দেখতে অভিন্ন বলে জানান তানিয়া।
এ ছবিগুলো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই ছবিটি আমি ২০১২ সালে কমলগঞ্জের আদমপুর রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে তুলেছি। একটি পাহাড়িছড়ার পাশে উদয়ী-বামনরাঙ্গা’র বাসার সন্ধান পাই। মাটির গভীর গর্তে বাসা করে সে ছানা ফুটিয়েছিল। আমার এই ছবিটিই ছিল বাংলাদেশে উদয়ী-বামনরাঙ্গা বাসার আলোকচিত্র ধারণের প্রথম রেকর্ড। ’
আন্তর্জাতিক প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এর তালিকায় বিশ্বব্যাপী এই উদয়ী-বামনরাঙ্গা ‘বিপদগ্রস্ত’ এবং আমাদের দেশে ‘অপ্রতুল-তথ্য’ এর পর্যায়ভুক্ত রয়েছে বলে জানান বন্যপ্রাণী গবেষক তানিয়া খান।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৭
বিবিবি/বিএস