বনের ভেতর নীরবে দাঁড়িয়ে বহুদিন এই দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করা মাত্রই মনকে তা নাড়া দিয়ে উঠে। কী জানি কিছুক্ষণ পর কোনো ছোটপাখি বড়শিকারী পাখিদের ‘শিকারে’ পরিণত হতে চলেছে।
ওদিকে, ছোটপাখিরা খুঁজছে তাদের নিরাপত্তা। নির্ভরতার বসবাসটুকু। পাতায়-পাতায় ডালে-ডালে ছুটে চলার অদম্য গতি যেন কেউ প্রতিরোধ না করে কখনো। যেন কোনো শিকারী পাখি নিচে নেমে এসে তাদেরকে খাদ্যে পরিণত করতে না পারে। ছোটপাখিদের এমন নির্ভরশীলতার একটি পাখির নাম ‘ভিমরাজ’।
ভিমরাজকে বাংলাতে ‘বড় র্যাকেটফিঙে’ নামে উল্লেখ করা হয়েছে। এর ইংরেজি নাম Greater Racket-tailed Drongo এবং বৈজ্ঞানিক নাম Dicrurus paradiseus। পতঙ্গভুক পাখি।
ভিমরাজের দৈর্ঘ্য ৩৫ সেন্টিমিটার। আকারে আমাদের পাতি-কাকের সমান। ভিমরাজের মাথায় থাকা বড় ঝুঁটি এবং ১৫ সেন্টিমিটারের সুদীর্ঘ লেজের ফিতাময় পালক এর কারণে পাখিরাজ্যের সমস্ত পাখি থেকে ভিমরাজকে সহজেই আলাদা করে চেনা যায়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং পাখি বিষয়ক আলোকচিত্রী ও পর্যবেক্ষক জালাল আহমেদ ‘ভিমরাজ’ সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, ভিমরাজ খুব সাহসী পাখি। এরা বনের যে এলাকায় বসবাস করে সেখানে ছোটপাখি শিকার করা বড়শিকারী পাখিরা আসতে সাহস পায় না। ভিমরাজের বাসার আশে-পাশে ছোটপাখিরাও বাসা বাঁধে। ফলে বনের ছোট পাখিরা স্বাচ্ছ্যন্দে ও নিরাপদে থাকতে পারে। সিলেট এবং চট্টগ্রামের চিরসবুজ বনের বাসিন্দা ভিমরাজ। ভিমরাজ মূলত পোকা-মাকড়, কীট-পতঙ্গ ধরে খায়। ছোটপাখিরাও তা-ই খায়। ফলে দুজনেই খাদ্য সংগ্রহ করে খাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বিরোধ নেই। বরং একে অপরের নিরাপত্তাদাতা। এরা যেখানে থাকে তার আশেপাশে পাঁচ-ছয় রকমের ছোটপাখি থাকে। ভিমরাজ আমাদের দেশের সুলভ আবাসিক পাখি বলে জানান তিনি।
ভিমরাজের শারীরিক গঠন সম্পর্কে জালাল আহমেদ বলেন, ভিমরাজের কপালে রয়েছে বিশাল ঝুঁটি। শরীরে চকচকে কালো রঙের শোভা। লেজের দুই প্রান্তে রয়েছে বেশ দীর্ঘ পালক। অনেকটা বাঁকানো রকেটের মতো। ছেলে এবং মেয়ে পাখির চেহারা অভিন্ন। অপ্রাপ্ত বয়স্ক পাখিদের মাথায় ঝুঁটি থাকে না এবং লেজের ডগার বাড়তি পালকও থাকে না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব গজায়। জুন থেকে আগস্ট মাসে এরা প্রজনন করে।
ভিমরাজের এই ছবিটি হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে তুলেছেন বলে জানান পাখি বিষয়ক আলোকচিত্রী ও পর্যবেক্ষক জালাল আহমেদ।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৭
বিবিবি/আরআই