বরিশাল সদর উপজেলার সাহেবের হাট-বাজার সংলগ্ন বণিক বাড়ির বাঁশঝাড়- যেখানে পানকৌড়ি, বক, বালি হাঁস, বাদুড়সহ নানান প্রজাতির পাখির দেখা মিলছে হরহামেশা।
শুধু সাহেবের হাটে নয়, বরিশালের বাকেরগঞ্জের উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন গাছগুলোতে ও বরিশাল নগরের বিবির পুকুর পূর্বপাড়ের গাছেও রয়েছে এরকম বহু পাখির আবাসস্থল।
এসব জায়গায় যাওয়া মানুষগুলোকে কখনও পাখির ডাকের কিচির-মিচির শব্দ আবার কখনও ডানা ঝাপটানোর শব্দ মোহিত করে তুলছে।
স্থানীয়দের কাছে জানা যায়, বাকেরগঞ্জের উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন ও বরিশাল নগরের বিবির পকুর পাড়ে পাখির বসতি কবে থেকে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি। তবে এ জায়গা দু’টিতে প্রায় সারাবছর ধরেই পাখির আনাগোনা থাকে।
অপরদিকে ৭/৮ বছর আগে হঠাৎ একদিন বরিশাল সদর উপজেলার সাহেবের হাট বাজার সংলগ্ন বণিক বাড়ির বাঁশঝাড়ে পানকৌড়ি, বক, বালিহাঁস ও বাদুড় আসতে শুরু করে।
স্থানীয়দের মতে, প্রতি বছর এখানে পাখির আনাগোনা বাড়ছে। এখন বণিক বাড়ির সব গাছেই কয়েক হাজার পাখি আবাস গেড়েছে। বৈশাখের শুরু থেকে আশ্বিনের শেষ পর্যন্ত থাকে এই পাখির বিচরণ।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পাখির বিষ্ঠায় ঘরের চাল, পোশাক-আশাক সবকিছু নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কোনো রাগ নেই যেন বণিক পরিবারের। তারা পাখিদের আগলে রাখছেন পরম মমতায়, বাড়ির কোনো গাছই ধ্বংস হতে দেন না তারা শুধু পাখির জন্য।
সাহবেরে হাটের বণিক পরিবারের সুমিত্রা বণিক জানান, তারা পাখির আসা-যাওয়া বেশ উপভোগ করেন। অনেকে পাখি দেখতে আসেন আবার অনেকে এয়ারগান বা ফাঁদ নিয়ে পাখি শিকারের জন্য আসেন। কিন্তু এই অতিথিদের নিরাপত্তা দিতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে নগরের বিবির পুকুরপাড়ের ব্যবসায়ী জসিম জানান, শহরের প্রাণকেন্দ্র সদর রোডে কোলাহল থাকা সত্ত্বেও বিবির পুকুরের পূর্বপাড়ে মেহেগনি, নারিকেল, রেইন্ট্রি গাছগুলো ঘিরে শালিক-চড়ুইয়ের বসবাস প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধই বটে। যেখানে বক-বাদুড়েরও দেখা মিলে।
স্থানীয়রা জানান, এখানকার যে সব গাছে পাখিরা আসে সেসব গাছের ডালপালা প্রায়ই কাটা হয়, আবার শরৎকালে গাছে পাতা থাকে না। তারপরও পাখিরা যে বছরের পর বছর ধরে এখানে থাকছে- এটা আসলেই একটি চমকপ্রদ ঘটনা। পাখির আবাসস্থলের নিচে চলাচলের রাস্তা রয়েছে, পাখির বিষ্ঠায় জামাকাপড় ব্যবসায়ীদের দোকান-পাট নষ্ট হচ্ছে, তারপরও কেউ একটুও রাগ করে না। বিশেষ করে স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা।
পাখির এ আবাসস্থলগুলো অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিত হলেও সরকারিভাবে সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেই। তবে স্থানীয় কিছু মানুষের ভালোবাসায় পাখিগুলো নিরাপদেই দিন পার করছে। স্থানীয়দের দাবি, এই পাখি ও পাখির আবাসস্থল রক্ষায় সরকার এগিয়ে আসুক।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মতিয়ার রহমান বলেন, পাখি ছাড়া সম্পূর্ণ হয় না আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ। পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায়ও পাখির অবদান রয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে এসব যায়গায় যাওয়া উচিত। অনেক বিরল পাখির দেখা মিলতে পারে। আর শিক্ষাজীবন থেকে যেন তারা বুঝতে পারে শিকার নয়, মানুষের পাখিপ্রেমী-প্রকৃতিপ্রেমী হওয়াটা দরকার।
বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, এসব বিষয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আবাসস্থগুলোরই পাখি সংরক্ষণে সরকারিভাবে আরও উদ্যোগ নিতে হবে। তবে সাধারণ মানুষকেও উদ্যোগী হতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭
এমএস/এএ