ভিড় ঠেলে কাছে সেই বানরের কাছে গিয়ে জানা গেলো এটা সেই ‘মুন্নি’! প্রায় দেড় মাস বয়সী ওর একটি সন্তান হয়েছে। মানুষের ভালোবাসায় বেশি বেশি খাবার পেয়ে থেকে।
বুধবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের রেলক্রসিংয়ের পার্শ্ববর্তী খোলা জায়গাটিতে মুন্নি তার সন্তানকে নিয়ে পাকা সড়কে বসে আছে। আর মা ও শিশুকে কেন্দ্র করে ইচ্ছে মতো ছবি তুলে চলেছেন পর্যটকরা।
কেউ কেউ আবার ‘সেলফি’ তুলতে গিয়ে নিজের মতো করে নাজেহালও হয়ে পড়েছেন। ছবি তুলতে দুরন্ত বানর শিশুটি কাছে ঘেঁষা মাত্রই এই অদ্ভুত মানুষগুলোকে ভয় দেখিয়ে বেশ মজা লুটে নিচ্ছে!
প্রায় এক-দেড় বছর আগে বানরের দল থেকে নিজের ছোটপুরুষ সন্তানটিকে বাঁচাতে পালিয়ে এসেছিল মুন্নি। বাংলানিউজের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য পাতায় গত বছরের ১৭ জুলাই ‘মুন্নি এখন একা’ এই শিরোনামে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষক বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. তবিবুর রহমান এ বানরটি সম্পর্কে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে চমকে দিলেন!
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মুন্নি ‘কোটা বানর’ প্রজাতির বানর। ইংরেজিতে যাকে বলে Rhesus Macaque। কিন্তু তার কোলের যে সন্তানটি সেটি কিন্তু একই প্রজাতির নয়। অন্য একটি প্রজাতির বানর।
কোন প্রজাতির তা জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন, তার সন্তানটি Northern Pig-tailed Macaque প্রজাতির বানর। যাকে বাংলায় ‘সিংহ বানর’, ‘কুলু বানর’ বা ‘ছোট লেজী বানর’ বলা হয়। তবে এ সন্তানটি কিন্তু কুড়িয়ে পাওয়া সন্তান নয়। মুন্নির গর্ভজাত সন্তান। মুন্নির সঙ্গে পুরুষ ‘সিংহ বানর’ এর ক্রসিং (মিলন) এর ফলেই তার গর্ভে সিংহ বানরের প্রজাতি এসেছে।
চায়ের মুখ গুজেই এসিএফ তবিবুরের সঙ্গে বানর প্রজাতির এসব আকর্ষণীয় আলোচনা কিছুটা দীর্ঘ হতে থাকে। তিনি বলেন, এই দুই প্রজাতির বানরই ছোট বা বড় দলে বিচরণ করে থাকে। এরা দিবাচর, বৃক্ষবাসী এবং ভূ-চর। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে- এদের দলে একজন মাত্র শক্তিশালী পুরুষ বা দল প্রধান থাকে। যাকে ইংরেজিতে ‘আলফা মেইল’ বলা হয়। আর সব নারী থাকে। ওই একজন পুরুষই নেতৃত্ব দেয় পুরো বানরের দলটিকে।
এর বেদনাদায়ক একটি দিকের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে এদের নৃশংস একটি দিক হলো, ওই দলের কোনো নারী বানরের গর্ভে যদি পুরুষ বানরছানা জন্ম লাভ করে তাকে সঙ্গে সঙ্গে ওই শক্তিশালী পুরুষ বানরটি এসে মেরে ফেলে। এর উদ্দেশ্যই হলো - যাতে করে এই দলে তার প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরি না হয়। কী নিষ্ঠুর – ভেবে দেখেছেন!
আরো তথ্যের কথা উল্লেখ করে তবিবুর রহমান জানান, ‘মাঝে মাঝে ওই দলে অন্য কোনো আরো শক্তিশালী পুরুষ বানর এসে দলের নেতৃত্ব নিতে দলের বর্তমান পুরুষ বানরটির সঙ্গে তুমুল যুদ্ধে লিপ্ত হয়। অনেক ক্ষেত্রেই একজনকে মরে যেতে হয় বা প্রাণরক্ষায় ভয়ে পালিয়ে যায়। ওই একজন শক্তিশালী পুরুষই ওই দলের সমন্ত নারী বানরের গর্ভসঞ্চার ঘটায়। এ রকমই পন্থায় প্রাণীকূলে অনাদিকাল ধরে চলে এসেছে। ’
ততক্ষণে দু’জনেরই ফুরিয়ে গেছে আদার চা। দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেলের দিকে প্রবেশ করছে রৌদ্রতাপ। বেলার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ফেরার তাগাদা। পেছনের স্মৃতিটুকু আজ শুধুই মুন্নি আর তার সন্তান।
কেউ কেউ বিস্কুট, কেক, চিপস প্রভৃতি খাবার দিয়ে মুন্নি’র অভ্যাস একদম পাল্টে ফেলেছেন। যে আর খাদ্য সংগ্রহের বনে যায় না। অসলতায় ভর করে মানুষের আশায় বসে থাকে। তার মাঝে এখন বনে গিয়ে নিজের খাবার নিজে সংগ্রহ করার এ ‘বন্যতা’টুকু আর অবশিষ্ট নেই!
বাংলাদেশ সময়: ১১১৪ এএম ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৭
বিবিবি/বিএস
**সন্তান নিয়ে ‘মুন্নি’ এখন একা!