বাইক্কাবিল পাখি পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের তত্ত্বাবধায়ক প্রয়াত মিরাস মিয়া কয়েক বছর আগে দূরবীক্ষণযন্ত্রের সাহায্যে এই পাখিটিকে দেখে আনন্দে আপ্লুত হয়েছিলেন। ‘বহু বছর পর দেখলাম’ বলে প্রাপ্তির হাসি হাসলেন।
প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বলেন, ‘কালোমাথা কাস্তেচরা’ পাখিটি জলাভূমি, নদী, প্লাবিত তৃণভূমি, ধানক্ষেত, জোয়ারভাটার খাঁড়ি ও উপকূলে বিচরণ করে। উড়ার সময় এরা বকের মতো গলা ভাঁজ করে না। শীতের আবাসে সম্পূর্ণ নীরব থাকে, কিন্তু গ্রীষ্মে বাসায় বসে শুকরের মতো নাকিসূরে ‘খোঁত’ ‘খোঁত’ শব্দে ডাকতে থাকে।
প্রজনন মৌসুমে এরা পানির ধারে আংশিক জলমগ্ন বৃক্ষে কিংবা গ্রামীণ কুঞ্জবনে ছোট ডালপালা দিয়ে মাচার মতো বাসা বানিয়ে ডিম পড়ে বলে জানান ইনাম আল হক।
বন্যপ্রাণী বিষয়ক আলোকচিত্রী সাঈদ বিন জামাল বাংলানিউজকে বলেন, পরিযায়ী ‘কালোমাথা কাস্তেচরা’ বর্তমানে বাংলাদেশের বিরলপ্রায় প্রজাতি। একে ‘কাঁচিচোরা’ও বলে। ইংরেজি নাম Black-headed Ibis এবং বৈজ্ঞানিক নাম Threskiornis melanocephalus। সাধারণত ছোট থেকে মাঝারি ঝাঁকে বাস করে। এখন আমাদের দেশে বড় ঝাঁকে দেখা যায় না। এই ছবিগুলো বাইক্কা বিল থেকে সম্প্রতি তোলা হয়েছে।
এর প্রাপ্তিস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, সুন্দরবন থেকে শুভলং এবং টেকনাফ থেকে টাঙ্গুয়ার হাওর যেখানে বড় বড় জলাশয়, বিল, হাওর এবং নদীর চর ও মোহনা-উপকূলীয় এলাকায় অল্পবিস্তর ‘কাস্তেচরা’ দেখা যায়। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, চীনসহ এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে। এদের শারীরিক গঠন ও খাবার সম্পর্কে তিনি বলেন, এ জলচর পাখিটির দৈর্ঘ্য সাধারণতঃ ৭৫ সেন্টিমিটার এবং ঠোঁট ২০ সেন্টিমিটার। ওজন প্রায় এক কেজির কাছাকাছি। লম্বা গলা, পা ও ঠোঁটের অধিকারী পাখিদের মধ্যে কাস্তেচরার রঙ পুরো সাদা। কেবল গলা থেকে ঠোঁট কালো এবং ঠোঁট লম্বা এবং নিচে বাঁকানো। পানিতে হেঁটে হেঁটে খাবার সংগ্রহ করে। প্রধান খাদ্য পোকামাকড়, কেঁচো, ছোট মাছ, ব্যাঙ ও অন্যান্য ছোট জলজপ্রাণী। বর্ষা এদের প্রজনন ঋতু।
বিশ্ব জীববৈচিত্র্য গবেষণা ও সংরক্ষণ সংস্থা ‘আইইউসিএন’ এর অনুসারে এরা Near Threatened প্রজাতি। পরিবেশ ধ্বংস এবং অবাধে শিকার এদেরকে আমাদের দেশে বিপন্নতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে জানান সাঈদ বিন জামাল।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৮
বিবিবি/এএটি