তবে গবেষকরা মনে করেন, পায়ের এমন লাল রঙের অধিক্য শত্রুপক্ষকে ধোঁকা দেওয়ার পাশাপাশি তার প্রজনন মৌসুমের শারীরিক শোভার নান্দনিক প্রতিফলন। যা তার প্রিয়াকে কাছে টেনে আনে।
‘লাল-পা গেছো ব্যাঙ’ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানেই প্রথম পাওয়া গিয়েছিল। এর ইংরেজি নাম Twin spotted Frog এবং বৈজ্ঞানিক নাম Rhacophorus bipunctatus।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস (২২ মে) উপলক্ষে বাংলানিউকে বলেন, ‘লাল-পা গেছো ব্যাঙ’ মাঝারি আকারের উভচর। এদের দৈর্ঘ্য ৩৬ থেকে ৫৫ মিলিমিটার। এই ব্যাঙের পছন্দ হলো ঝোঁপঝাড়। এরা মাটিতেও থাকে না; আবার খুব উঁচু গাছেও থাকে না। এরা থাকে ছোট ছোট গাছ দিয়ে প্রাকৃতিভাবে তৈরি হওয়া ঝোপঝাড়ে।
“ওরা যে ডালে বসে থাকে এর আশপাশে ডাল নড়ে-চড়ে উঠলে বা যদি কোনো কারণে সে ‘থ্রেট-ফিল’ করে কিংবা টের পায় যে শত্রুপক্ষ চলে এসেছে তখন সঙ্গে সঙ্গে হাত-পায়ের লাল অংশগুলো গুটিয়ে নিজের পিঠের নিচে নিয়ে যায়। শরীরের সবুজ অংশ সবুজ পাতার সঙ্গে একেবারে মিশিয়ে ফেলে। শত্রুরা তখন তাকে পাতা মনে করে এবং এ যাত্রায় সে রক্ষা পায়। ”
এর ডাক উচ্চস্বরের নয়; ‘ট্রিটট’ ‘ট্রিটট’ করে হালকা ধ্বনি ছড়ায়। এরা সন্ধ্যার দিকে এবং ভোরে কর্মচাঞ্চল্যে তৎপর থাকে। ছোট ছোট কীটপতঙ্গ বা ক্ষুদ্র পোকা প্রভৃতির সন্ধানে এদিক-ওদিক ঘোরাফেরা করে বলে জানান অধ্যাপক কামরুল।
উভচর প্রাণীর উপকারিতা সম্পর্কে ড. মো. কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ‘এরা আমাদের ‘ইন্ডিকেটর পিসিস’ (সংকেতকারী প্রজাতি) বা ‘এনভায়রনমেন্টাল অ্যাম্বাসেডর’ (পরিবেশ প্রতিনিধি)। যে ‘হ্যাবিটেডে’ (পরিবেশে) প্রচুর ব্যাঙ থাকে সেটাকে ধরে নেওয়া হয় যে সেখানে তাদের ‘ফুড প্রোডাকশন’ (খাদ্য উৎপাদন) খুব ভালো আছে। আর এটা থাকার মানেই সেখানের এনভায়রনমেন্টটা খুব ‘হেলথি’ (সুস্বাস্থ্য) এবং পুরোপুরি ‘ইকো-সিস্টেম’ (বাস্তুতন্ত্র) রয়েছে সেখানে। ’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘এখন কোনো কারণে যদি কোনো এনভায়রনমেন্টে ব্যাঙ না থাকে বা যে পরিমাণ থাকার কথা যে পরিমাণ নেই; তার মানে ধরেই নেওয়া যায় যে ওখানে এমন কোনো ‘চেঞ্জ’ (পরিবর্তন) আসছে, যে কারণে ইনসেক্টস (পতঙ্গ) প্রোডাকশন (উৎপাদন) কম এবং যে কারণেই ব্যাঙেরও স্বাভাবিক ব্রিডিং (প্রজনন) হচ্ছে না। এর সামগ্রিক অর্থটি দাঁড়াচ্ছে যে ওখানে এনভায়রনমেন্ট পলিউটেড (পরিবেশ দূষণ) রয়েছে। ’
‘লাল-পা গেছো ব্যাঙ’ এর প্রজননকাল বৃষ্টি মৌসুম অর্থাৎ জুন-জুলাই। লাউয়াছড়া ছাড়াও এ ব্যাঙগুলোকে সাতছড়ি, কালেঙ্গাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বনগুলো পাওয়া যায় বলে জানান ড. মো. কামরুল হাসান।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৬ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৮
বিবিবি/জেডএস