এপ্রসঙ্গে বাংলানিউজের কথা হয় ড. বেলালের সঙ্গে। নোয়াখালীর উপকূলীয় এলাকা থেকে পাওয়া 'নোবিপ্রবিয়া' ও 'অ্যাররেনারুস স্মিটি' নামে নতুন দুটি অমেরুদণ্ডী প্রাণীর মধ্যে ‘নিউমেনিয়া নোবিপ্রবিয়া’ নামটি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) নাম থেকে করা হয়েছে।
ড. মো. বেলাল হোসেনই একমাত্র বাংলাদেশি বিজ্ঞানী যিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্পূর্ণ নতুন এ প্রাণীর সন্ধান দিলেন। এর মাধ্যমে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে নতুন করে চেনালেন খ্যাতিমান এ সমুদ্র বিজ্ঞানী।
ড. মো. বেলাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, নতুন আবিষ্কারের কাজে সহ-গবেষক ছিলেন মন্টেনেগ্রোর বিখ্যাত একারলজিস্ট ড. ভ্লাদিমির, ইন্ডিয়ার টাপাস, ছাত্র সাইফুল ও পোল্যান্ডের ড. আন্দ্রেজেঝ। চার দেশের পাঁচ গবেষকের সমন্বিত গবেষণায় এ দু’টি প্রজাতি আবিষ্কৃত হয়।
‘প্রাণিজগতের আর্থ্রোপোডা পর্বের একারিয়া বর্গের অন্তর্গত প্রাণী দু’টি অত্যন্ত ছোট এবং দেখতে কিছুটা মাকড়শার মতো। এরা মাইটস নামে পরিচিত। এদের আকার ২/৩ মিলিমিটার এবং হাল্কা লাল ও হলুদ বর্ণের হয়। দু’টি শুঁড় ছাড়াও এদের চার জোড়া সন্তরণ-পা থাকে। এরা সাধারণাত পুকুর, নদী বা খালের পানির উপরের স্তরে ভাসমান উদ্ভিদের সঙ্গে ঝুলে থাকে। খাবার হিসেবে উদ্ভিদকণা গ্রহণ করে। তবে লার্ভা অবস্থায় এরা অন্যসব জলজ প্রাণীর দেহে পরজীবী হিসেবে বাস করে এবং তাদের থেকে খাবার সংগ্রহ করে। এরা খাদ্যচক্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ড. বেলাল জানান, ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত তিনি ও ছাত্র সাইফুল নোয়াখালীর বিভিন্ন পুকুর, খাল ও নদী থেকে মাইটসের নমুনা সংগ্রহ করে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবে প্রাথমিক শনাক্তকরণের কাজ সম্পন্ন করেন। চূড়ান্ত শনাক্তকরণের জন্য মাইটসের নমুনাগুলো মন্টেনেগ্রোতে ড. ভ্লাদিমিরের কাছে পাঠানো হয়। তিনি নমুনাগুলো চূড়ান্তভাবে শনাক্ত করেন। নতুন আবিষ্কৃত প্রজাতি দু’টির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিলাভের জন্য গবেষণার ফলাফল লন্ডন ও নিউজিল্যান্ড থেকে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী Systematics and Applied Acarology তে পাঠানো হয়।
যা চলতি বছরের মে মাসের ১৫ তারিখে ‘First records of water mites from Bangladesh (Acari, Hydrachnidia) with description of two new species by Vladimir Pesic, Mohammad Belal Hossain, Tapas Chatterjee, Md. Saiful Islam and Andrezej Zawal’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে।
এর আগে নতুন প্রজাতি হিসাবে Zoobank ডাটাবেজে নিবন্ধিত হয়।
‘আমাদের জলরাশি অত্যন্ত জীববৈচিত্র্যপূর্ণ। গবেষণার অপ্রতুলতার কারণে অনেক প্রজাতি মানবসৃষ্ট দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবিষ্কারের আগেই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। ’
এর আগে ‘নেফাটাইস বাংলাদেশি' ও 'ভিক্টোরিয়া ব্রুনেইসিস' নামে আরও দু’টি অমেরুদণ্ডী প্রাণীর সন্ধান দিয়েছিলেন এই বিজ্ঞানী।
এ সম্পর্কে ড. বেলাল বলেন, প্রাণিজগতের প্রতিটি প্রাণীই ইকো সিস্টেমে তথা খাদ্যচক্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এদের কোনো একটির অনুপস্থিতিতেই খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে পড়ে, ফলে ইকো সিস্টেম তার স্বাভাবিক কার্যক্রম ধরে রাখতে পারে না। আমাদের জলরাশি অত্যন্ত জীববৈচিত্র্যপূর্ণ। গবেষণার অপ্রতুলতা, মানবসৃষ্ট দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবিষ্কারের আগেই অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব।
ড. বেলাল হোসেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড ফিশারিজ বিভাগে স্নাতক, যুক্তরাজ্যের হাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স এবং ব্রুনাই দারুসসালাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। সম্প্রতি তিনি অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়াম রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২২ ঘণ্টা ২২ মে, ২০১৮
এসএইচডি/এএ/জেএম