সাপ ধরে সাপ খেতে পটু বিষাক্ত ‘শঙ্খিনী’। তবে তা বরাবরেই ঘটে যায় প্রকৃতির গভীর নিস্তব্ধতায়।
বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফের ক্যামেরায় সেই নির্জন রাতে ধরা পড়েছে শঙ্খিনী সাপের সাপ গিলে ফেলার দুর্লভ আলোকচিত্রগুলো। সঙ্গে ছিলেন তরুণ গবেষক ফারজানা রিক্তা। বাংলানিউজের পাঠকের জন্য তিনি তুলে ধরেছেন সেই দৃশ্যগুলো।
আদনান আজাদ আসিফ বাংলানিউজকে বলেন, ছবিগুলো বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে সম্প্রতি তুলেছি। সে সাপ ধরে খায় বলে স্থানীয়রা এই ‘শঙ্খিনী সাপ’টিকে ‘রাজাসাপ’ বলে। এই সাপগুলো প্রায় ৬ ফিটের মতো হয়। এরা নিশাচর। জলাশয়ের আশপাশে এরা ঘুরে বেড়ায়।
ছবি ধারণের মুহূর্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিদিনের মতো রাতের অন্ধকারে বন পরিভ্রমণ করছি। হঠাৎ আলো ফেলতেই চোখে পড়লো দুটো সাপ আমাদের সামনে অবস্থান করছে। তারপর ভালো করে লক্ষ্য করতেই অবাক হলাম! বুঝতে বাকি রইলো না, শঙ্খিনী তার শিকার হিসেবে একটি ‘ঢোঁড়া সাপ’-কে বেছে নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শঙ্খিনী তার শিকার হিসেবে যে সাপটিকে পায় প্রথমে তার কোমড়ে কামড় দেয় এবং সহজে ছাড়ে না। তখন বিষাক্ত শঙ্খিনীর বিষ সেই সাপটির শরীরে প্রবেশ করে। তারপর সেই সাপটি আত্মরক্ষায় শঙ্খিনীকেও কামড় দেয়। ধীরে ধীরে বিষের প্রভাবে সেই ঢোঁড়া সাপটি ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছিল। ঢোঁড়া সাপটিও প্রায় তার সমানই ছিল।
‘শঙ্খিনী সাপটি ঢোঁড়া সাপটাকে গিলে ফেলতে প্রায় দু-তিন ঘণা সময় নিলো। প্রথমে ঢোড়াটার মাথাটা ধরে তারপর আস্তে আস্তে গেলা শুরু করে। আমার সঙ্গে ছিলেন তরুণ গবেষক ফারজানা রিক্তা। আমরা দু’জনেই প্রকৃতির মাঝে নির্জন আঁধারে এই বিরল দৃশ্যের মুখোমুখি হলাম এবং আলোকচিত্রগুলো ক্যামেরাবন্দি করলাম। ’
প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, শঙ্খিনী তার শিকার পেয়ে তাকে হত্যা করে গিলে ফেলায় এতোটাই মত্ত ছিল যে একসময় আমার পায়ের উপর উঠে গেলো। এরা এমনি একাগ্রতার সঙ্গে এক মনে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের প্রতি অব্যর্থ।
প্রখ্যাত বন্যপ্রাণী গবেষক, লেখক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল খান বাংলানিউজকে বলেন, শঙ্খিনীর ইংরেজি নাম Banded Krait এবং বৈজ্ঞানিক নাম Bungarus fasciatus। এরা প্রধানত সাপই খায়। কিছু ক্ষেত্রে অন্য প্রাণীও খায়।
এরা কমবেশি দেশের বিভিন্ন বনাঞ্চলসহ গ্রামাঞ্চলেও রয়েছে। তবে কমন বলা যাবে না। মানে অল্পবিস্তরভাবেই রয়েছে বলে জানান ড. মনিরুল খান।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৮
বিবিবি/এএ