২০০০ সালের দিকে বন্যপ্রাণী গবেষকরা মনে করেন, পৃথিবীতে আর বাটাগুর বাসকার কোনো অস্তিত্ব নেই। ২০০৮ সালে গবেষকরা প্রকৃতিতে বাটাগুর বাসকা আছে কি না তা খুঁজতে শুরু করেন।
করমজলে বাটাগুর বাসকার গবেষণায় বন বিভাগের সঙ্গে আরও তিনটি সংস্থা যোগ দেয়। তারা হলো- প্রকৃতি ও জীবন, ভিয়েনা চিড়িয়াখানার গবেষণা দল ‘ভিয়েনা জু’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের কচ্ছপ সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থা ‘টার্টেল সার্ভাইভাল অ্যালায়েন্স’।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, গবেষকদের গবেষণা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে ২০১৭ সালে দুইটি বাটাগুর বাসকা ডিম দেয়। তাতে ৫৭টি বাচ্চা হয়। ২০১৮ সালে ২২টি বাচ্চা দেয় বাটাগুর বাসকা। এনিয়ে করমজলের প্রজনন খামারে বাটাগুর বাসকার সংখ্যা এখন ১৮১টি। জন্ম নেয়া বাচ্চাগুলোর মধ্যে ১১টির লিঙ্গ পরিচয় পাওয়া গেছে। যার প্রত্যেকটি পুরুষ। এ পুরুষ বাটাগুর বাসকা নিয়ে বিপাকে পড়ে গবেষকরা। পুরুষদের জন্য কিভাবে নারী সঙ্গী পাওয়া যায় তা নিয়ে চলতে থাকে গবেষণা। এক পর্যায়ে বন বিভাগের কর্মকর্তা ও গবেষকরা নির্ধারণ করেন কিছু পুরুষ বাটাগুর বাসকার শরীরে রেডিও ট্রান্সমিটারের সঙ্গে স্যাটেলাইট যুক্ত করে সুন্দরবনের নদী ও খালে অবমুক্ত করা হবে। সেখানে যদি নারী বাটাগুর বাসকা থাকলে পুরুষরা খুঁজে বের করতে পারবে। সাথে সাথে প্রকৃতিতে বাটাগুর বাসকার জীবনাচারণও জানা যাবে।
গবেষকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর পাঁচটি বাটাগুর বাসকার শরীরে রেডিও ট্রান্সমিটারের সঙ্গে স্যাটেলাইট যুক্ত করে সুন্দরবনের ৪৩ নাম্বার কম্পার্টমেন্ট এলাকা কালিরচরে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবমুক্ত করা হয়। অবমুক্ত হওয়া বাটাগুর বাসকাগুলোর বিচরণ ও জীবনাচার ভিয়েনা থেকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। তবে সঙ্গী খুঁজতে যেয়ে বিপাকে পড়ে বাটাগুর বাসকাগুলো।
২০১৮ সালের শেষের দিকে পটুয়াখালিতে জেলেদের জালে ধরা পড়ে একটি বাটাগুর বাসকা মারা যায়। মারা যাওয়ার পরে ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে জানতে পারে বন বিভাগ। বন বিভাগের লোকজন পাথরঘাটা বন বিভাগের অফিসের একটি জায়গায় মৃত বাটাগুর বাসকাটিকে মাটি চাপা দেয় এবং রেডিও মিটার যুক্ত স্যাটেলাইটটিকে করমজলে নিয়ে আসে। মৃত বাটাগুর বাসকার দেহটি পরে আবার গবেষণার জন্য উঠানো হবে বলে জানান মাহমুদুল হাসান।
তিনি আরো বলেন, চলিত বছরের ২১ ও ২৩ জানুয়ারি সুন্দরবনের নদীতে জেলেদের জালে দুটি স্যাটেলাইট যুক্ত বাটাগুর বাসকা ধরা পড়ে। তবে বনবিভাগের কর্মকর্তাদের তৎপরতায় বাটাগুর বাসকা দুটি বেঁচে যায়। তারপর বাটাগুর বাসকার করমজলে কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়।
সুন্দরবন করমজল কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৪ সালে আমাদের এখানে বাটাগুর বাসকাগুলো আনার পর থেকে বন বিভাগ ও অন্য গবেষণা সংস্থার লোকেরা নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে বাটাগুর বাসকাগুলোকে। এগুলো লোনা পানির প্রজাতি হওয়ায় আমাদের এখানে বাটাগুর বাসকাগুলো ভালই আছে। তবে জন্ম নেয়া ছানাগুলো বেশিরভাগ পুরুষ হওয়ায় কিছুটা বিপাকে আছি আমরা।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, বাটাগুর বাসকা প্রজাতির এই কচ্ছপগুলোকে সুন্দরবনের প্রকৃতিতে আর পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা প্রজাতিকে টিকিয়ে রাখতে কচ্ছপগুলোর জীবনাচার সম্পর্কে জানতে আমরা গবেষণা করছি। গবেষণার অংশ হিসেবে পাঁচটি কচ্ছপের শরীরে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার যুক্ত করা হয়েছে। আমরা তাদের গতিবিধি ও জীবনাচার সম্পর্কে খুব শিগগিরই ধারণা পাবো। এ সম্পর্কে জানার পরে আমরা নতুনভাবে বাটাগুর বাসকা নিয়ে কাজ করতে পারবো।
জেলেদের জালে কচ্ছপ আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, সুন্দরবনের নদীতে জেলেরা মাছ আহরণ করে। কচ্ছপও নদীতে নির্বিঘ্নে চলাচল করে। তাই জেলেদের জালে ধরা পড়ে। এজন্য আমরা কচ্ছপগুলোর গায়ে মোবাইল নাম্বার যুক্ত করে দিয়েছি। যাতে জেলেদের জালে ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাটাগুর বাসকার গায়ে থাকা মোবাইল নম্বরে ফোন করে আমাদের জানাতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৯
এনটি