এই মেছোবাঘটিই ছিল বন্যপ্রাণী গবেষক তানিয়া খানের সেবাশুশ্রুষা পাওয়া শেষ প্রাণী। ১২ দিন এই মেছোবাঘটিকে মায়ের মতোই যত্নআত্তি করে গেছেন তিনি।
মৃত্যুর সময়টিতেও তানিয়ার পরিচর্যায় ছিল মেছোবাঘের এ ছানা। গত বুধবার (১৩ মার্চ) হৃদরোগজনিত কারণে ঘুমের মধ্যেই মারা যান বন্যপ্রাণী গবেষক তানিয়া খান। তারপর থেকে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা বন্যপ্রাণী সেবাকেন্দ্র ‘সোল’ (সেভ আওয়ার আনপ্রোটেক্টেড লাইফ) এর প্রাণীরা এতিম হয়ে পড়ে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা সূত্র থেকে জানা যায়, মৌলভীবাজারের মমরুজপুর এলাকায় শিশুদের হাতে ধরা পড়ে মেছোবাঘের ছানাটি। বাচ্চাটির বয়স তখন ৮-১০ দিন। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ বাচ্চাটি ৪ মার্চ উদ্ধার করে তানিয়ার কাছে হস্তান্তরের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মেছোবাঘের ছানাটির কথা শুনেই তানিয়া খান ছানাটিকে তার নিজের কাছে রেখে লালন-পালনের জন্য রাজি হয়ে যান।
সেদিনই তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে মেছোবাঘের ছানাটিকে কোলে করে বাসায় ফেরেন। শুরু হয় তার অসুস্থতার মধ্যেও মেছোবাঘ ছানার যত্নআত্তি। তখনও ছানাটির চোখ ফোটেনি; ভালো করে হাঁটতে পারছিল না।
আলোচনার এক ফাঁকে তানিয়া খান বাংলানিউজকে বলেছিলেন- ‘আমি আর মেছোবাঘের ছানা দু’জনেই টিকে থাকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি। কে সারভাইব করবো জানি না...’। তিনি আরো বলেছিলেন, ‘এই মেছোবাঘের ছোট ছানাটিকে লালনপালন আমার জীবনের সবচেয়ে বড় উল্লেখ্যযোগ্য ঘটনা। ’
আজ তানিয়া খান নেই; কিন্তু তার জীবনের শেষ দিনগুলোতে সেবাশুশ্রুষা পাওয়া শেষপ্রাণীটি টিকে আছে।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) সকালে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জানকিছড়া ক্যাম্পের লাউয়াছড়া রেসকিউ সেন্টারে গিয়ে দেখা গেলো তানিয়া খানের সেই মেছোবাঘের ছানাটি সুস্থ আছে এবং খাওয়া-দাওয়া করছে ঠিকমতো।
লাউয়াছড়া রেসকিউ সেন্টারের দায়িত্বে থাকা ঋষি বড়ুয়া বলেন, ‘বুধবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টায় মেছোবাঘের ছানাটি এখানে এসেছে। সকাল-বিকেল নিয়মিত খাবার দিচ্ছি। দিনে শুটকি খেতে দিচ্ছি। রাতে তাজা কোয়েল পাখি খেতে দেবো। ’
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) শামসুল মুহিত চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘তানিয়া খানের মেছোবাঘের ছানাটিকে বড় করতে তুলতে আমরা প্রয়োজনীয় খাদ্যসহ সেবাযত্ন করে যাচ্ছি। এ প্রাণীটি আমাদের সবার আবেগের অংশ হয়ে গিয়েছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৯
বিবিবি/জেডএস