কথা বলতে বলতেই জানালার ফাঁক দিয়ে চোখ যায় ছাদে লাগানো আঁখের (ইক্ষু) দিকে। ইচ্ছে হচ্ছিল খাওয়ার টেবিল থেকে তখনই উঠে বাগানটা দেখে আসি কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি।
বাসা থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠার পরে প্রথম যা দেখেছি তা অবাক হওয়ার মতোই। ১৩ তলা ভবনের উপরে ছাদে লাগানো নারকেল গাছ! তাও আবার নারকেলে ভরপুর! বলছি সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রফিক ভূঁইয়ার ছাদ বাগানের কথা।
রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় রফিক ভূঁইয়ার নিজের বাড়ি লাটিমী ভবনের ছাদে তিনি শখের বসে গড়ে তুলেছেন সমৃদ্ধ এ বাগানটি। সম্প্রতি ঘুরে দেখার সুযোগ হয় বাগানটি। বাগানের মালিক নিজেই একটি একটি করে গাছগুলো দেখিয়েছেন।
কি নেই তার বাগানে। ফুল, ফল, সবজি, পাতাবাহার থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের গাছে সমৃদ্ধ বাগানটি। দেখলে যে কোনো প্রকৃতি প্রেমীই আকৃষ্ট হবেন, বাগানের মধ্যেখানে ছাতার নিচের চেয়ার-টেবিলে বসে সতেজ বাতাস নিজের শরীরে লাগাতে চাইবেন। ফুলের ঘ্রাণ আর সতেজ বাতাসে মুহূর্তেই চোখ জুড়িয়ে আসবে।
ছাদ বাগান ঘুরে দেখা যায় ফলের মধ্যে রয়েছে, বিভিন্ন প্রজাতির আম, জাম, পেয়ারা, ডালিম, আনারস, কমলা, মালটা, জাম্বুরা, সফেদা, আব্রুজ, আঙ্গুর, লেবু, আমলকী, আমড়া, পেঁপে, বেল, আতা, বিভিন্ন প্রজাতির কুলসহ আরও অনেক ধরনের ফল গাছ।
সবজির মধ্যে বেগুন, টমেটো, মরিচ, লাউ, কুমড়ো, পুঁই শাক, লাল শাক, কলমী শাক, সিম, দনিয়া, পুদিনা, তেজপাতা ঢেঁড়শসহ আরও অনেক ধরনের শাক-সবজি।
ফুলের মধ্যে রয়েছে নানা প্রজাতির ক্যকটাস, গোলাপ, বেলী, রজনী গন্ধা, হাসনা হেনা, রঙ্গন, অ্যালোভেরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ। রয়েছে নানা প্রজাতির ওষধি গাছ ও বিভিন্ন ধরনের ঘাস।
রফিকুল ভূইঁয়া জানান, জলবায়ু পরিবর্তনে তাপমাত্রা বাড়ছে, প্রতিনিয়ত বাড়ছে দূষণ। আর এ বিপর্যয় রোধে ফাঁকা তপ্ত ছাদকে শীতল করতে এবং পরিবেশকে সহনীয় করতে পারে ছাদের গাছপালা। এ বোধ থেকে শখের বসেই তিনি গড়ে তুলেছেন এ বাগানটি।
তিনি বলেন, ছাদ কৃষির বিকাশে সুস্থ থাকবে মানুষ, শীতল থাকবে প্রকৃতি আর সবুজ ছোঁয়ায় সতেজ হবে নগরজীবন।
তিনি আরও বলেন, প্রকৃতি প্রেম থেকেই তিনি গড়ে তোলেন এ বাগান। যেখানে রয়েছে দুর্লভ প্রজাতির নানা গাছ। টব এবং ড্রামে পরম যত্নে বেড়ে উঠছে গাছগুলো।
ব্যবসায়ী রফিক ভূঁইয়া বলেন, তার ১৩ তলা ভবনের উপরে সাড়ে তিন হাজার বর্গফুটের ছাদে বাগানটি সাজানো হয়েছে। রয়েছে প্রায় চার শতাধিক গাছ। বাগানের পাশাপাশি রয়েছে কবুতরের খোঁপ, ব্যায়ামাগার ও বসার জন্য বিশ্রামাগার। বাগানটির ফল-ফুলের ঘ্রাণে উপকৃত হচ্ছেন আশপাশের ভবনগুলোর বাসিন্দারাও।
তিনি বলেন, ছাদ বাগান শুধু সৌন্দর্যই বাড়ায় না, পরিবারের ভেজাল মুক্ত ফল ও শাক-সবজিরও যোগানের অন্যতম উৎস। এ বাগান থেকে পরিবারের সবজি ও দেশীয় ফলের চাহিদা মেটানোর পর আত্মীয় স্বজনের বাড়িতেও পাঠানো যায়।
রফিক আরও বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেই তিনি ড্রাম ও টবে গাছ লাগিয়েছেন এতে তার ভবনের কোনো ধরনের ক্ষতি হচ্ছে না।
গাছের পরিচর্যার ব্যাপারে তিনি বলেন, ব্যবসার কাজের পর যেটুকু সময় পান তার অধিকাংশ সময় তিনি এ বাগানেই কাটান। বাগানের প্রত্যেকটা গাছকে তিনি নিজের সন্তানের মতোই যত্ন করেন। কোন ধরনের রাসায়নিক সার প্রয়োগ না করে জৈব সার ব্যবহার করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৯
এসএইচডি/আরআইএস/