বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশই এখন যুবক। তাই আমাদের দেশের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
রোববার (১৭ নভেম্বর) মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে আয়োজিত যুব সম্মেলনে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির আয়োজনে এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চের উপদেষ্টা ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য ড. আইনুন নিশাত। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. এসএম মঞ্জুরুল হান্নান খান এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি ও নগর উন্নয়ন কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. লিয়াকত আলী।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস (বিইউপি), ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ), আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (আইইউবি) শিক্ষার্থীরা।
সম্মেলনে বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব বিষয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের ফেলো ড. মো. গোলাম রাব্বানি। এরপর ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির কার্যক্রম তুলে ধরেন কর্মসূচির প্রধান আবু সাদাত মনিরুজ্জামান খান।
সম্মেলনে বলা হয়, ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার রোডম্যাপ তৈরি হয়ে গেছে এবং যুবসমাজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে। এই যুবকেরা বিভিন্ন সংস্থা এবং প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, যারা জলবায়ু বিষয়ে সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও এর সমাধানে কাজ করছে।
ড. আইনুন নিশাত বলেন, ‘আবহাওয়া ক্রমশ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। আমাদের শরৎ, হেমন্ত, বসন্ত ঋতু হারিয়ে যাচ্ছে। অক্টোবরের মাঝামাঝি অসময়ে অতিবৃষ্টি, রাজশাহীতে বন্যা পর্যন্ত হয়ে গেল। আবার কোনো কোনো এলাকায় পাট পচানোর পানিও মেলে না। ১৮৬০ সালে শিল্প বিপ্লবের সময় জলবায়ু বিপর্যয়ের শুরু, আর আমরা এই হিসাব শুরু করলাম ১৯৯০ সালে। তাই পৃথিবী টিকিয়ে রাখতে কার্বন ডাই-অক্সাইডসহ ক্ষতিকর গ্যাসগুলো যত কম নিঃসরণ করা যায়, ততই মঙ্গল। ’
এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তরুণদের সম্পৃক্ত করায় ব্র্যাককে ধন্যবাদ জানিয়ে ড. এসএম মঞ্জুরুল হান্নান খান বলেন, ‘শিল্পোন্নয়নের নামে যেভাবে উন্নত দেশগুলো দূষণ ছড়াচ্ছে, তার শিকার পৃথিবীর সবাই। আজকের শিশু তার মা-বাবার তুলনায় গড়ে চার ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রায় জন্ম নিচ্ছে। এই বিপর্যয় বাড়তে থাকলে ২০৫০ সালে ৯৩০ কোটি মানুষের পৃথিবীর অবস্থা হবে খুবই খারাপ। ’
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমাদের আগের প্রজন্ম যে অন্যায় করে গেছে, তার ফল আমরা ভোগ করছি। এই জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে। উন্নয়নের ধারাটা যেন টেকসই হয়। ’
অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাবির ফারহান সাকিব বলেন, ‘উন্নত বিশ্বের মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বিষয়ে যতটা সচেতন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ তার সিকিভাগও নয়। সচেতনতা বাড়াতে আমরা তরুণেরা কাজ করতে চাই। ’
আরেক শিক্ষার্থী নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির মেনজাবী মাহমুদ মাত্রা বলেন, ‘এই ঝুঁকি মোকাবিলার প্রতিটি পদক্ষেপে নবীনদের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। ’
বাংলাদেশ সময়: ০২০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৯
এসএ/