কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অসচেতনতা, অবহেলা আর উদাসীনতায় ক্যাম্পাসের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করার নামে আগুন দিয়ে পরিবেশ ধ্বংসের ফলে হুমকির মুখে এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, গত কয়েকদিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম সংলগ্ন এলাকা, সুইমিং পুলের চারপাশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হল সংলগ্ন এলাকা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পাশের এলাকা, আল-বেরুনী হল সংলগ্ন কাশবনের মাঠ ও চিকিৎসা কেন্দ্রের পেছনে বনজঙ্গল আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছে।
এছাড়া সর্বশেষ গত রোববার (১ মার্চ) মানবসৃষ্ট আগুনে মীর মোশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন এলাকায় প্রায় চার ঘণ্টা ধরে ৩ একরেরও বেশি জঙ্গল পুড়তে থাকে। সেখানকার ৩৫ থেকে ৪০টি কাটা গাছ মানবসৃষ্ট এ আগুনে পুড়ে গেছে। এ সময় দুটি শেয়ালকে আতঙ্কে এদিক-ওদিক ছোটাছুটিও করতে দেখা যায়। জঙ্গলের ভেতরে তখন দাউদাউ করে আগুন জ্বলছিল। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে।
বনাঞ্চলে আগুন ও সংশ্লিষ্ট লোকজনের উদাসীনতায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী রাতুল হাসান বলেন, প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে ক্যাম্পাসের ঝোপঝাড় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে ক্যাম্পাসে অবস্থানরত বিভিন্ন পশুপাখি, কীটপতঙ্গের বাস্তুসংস্থান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। এ রকম চলতে থাকলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যখ্যাত আমাদের এই সবুজ ক্যাম্পাস তার নিজস্বতা হারাবে, হারাবে তার চিরচেনা রূপ। অতি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান প্রয়োজন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন বলেন, ক্যাম্পাসের জঙ্গলগুলোতে সাপ, বেজি, শেয়াল, বিভিন্ন প্রজাতির পাখিসহ নানা ধরনের বন্যপ্রাণীর বাসস্থান আছে। কিন্তু প্রতি বছরই আগুনের কারণে প্রাণীদের খাবার ও বাসস্থানের সঙ্কট সৃষ্টি হয়। এছাড়া অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় বড় দালান তৈরি করতে গাছ কাটছে। কিন্তু এতে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে সেটা কেউ ভাবছে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এখনই সতর্ক হতে হবে। না হলে অদূর ভবিষ্যতে এসব প্রাণী হারিয়ে যাবে।
প্রজাপতি নিয়ে গবেষণার জন্য পরিচিত এ শিক্ষক আরও বলেন, ক্যাম্পাসে একসময় ১১০ প্রজাতির প্রজাপতি পাওয়া গেছে। কিন্তু দিন দিন এসব প্রজাপতির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সর্বশেষ আমরা ক্যাম্পাসে ৭০ থেকে ৭২ প্রজাতির প্রজাপতির দেখা পেয়েছি। বনজঙ্গল ধ্বংস করার ফলে প্রজাপতির আবাসস্থলের পাশাপাশি খাবারের সঙ্কট দেখা দেয়। এর ফলে প্রজাপতির সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
ক্যাম্পাসের বনজঙ্গল ধ্বংসে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মুখ্য উদ্যানতত্ত্ববিদ নুরুল আমিন বলেন, অনেক সময় কে বা কারা আগুন জ্বালিয়ে চলে যায় তা আমরা জানতে পারি না। তবে আগুন লাগানোর খবর জানতে পারার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা নেভানোর চেষ্টা করি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০২০
এএ/এইচজে