প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের জন্য রূপের রাণী রাঙামাটি জেলা দেশ ও দেশের বাইরে আলাদা সুখ্যাতি রয়েছে। তাই মানুষ কোলাহল ছেড়ে প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে এ জেলায় ছুটে আসে প্রতিবছর।
বেশ কয়েক বছর ধরে মানুষ পাহাড় কেটে ঘর-বাড়ি নির্মাণ এবং কাপ্তাই হ্রদে বর্জ্য অপসারণের কারণে অপরূপ রাঙামাটি তার আপন সৌন্দর্য হারাতে বসেছিল। কিন্তু করোনার আর্শিবাদ পেয়ে রাঙামাটি তার হারানো রূপ আবারও ফিরে পেতে শুরু করেছে। তাই তো চলতি একটি কথা রয়েছে, ‘কাল কারো জন্য আর্শিবাদ আবার কারোর জন্য অভিশাপ’। তাইতো করোনা মানবজাতির জন্য অভিশাপ হলেও প্রকৃতির জন্য আর্শিবাদ হয়ে আবির্ভাব হয়েছে। পাহাড়ি জেলা রাঙামাটির বেশকিছু পাহাড় এখন বিঝু ফুলের সমারোহ। প্রকৃতিতে মেলে ধরছে তার আপন সৌন্দর্য। চোখ পড়লে ফেরাতে মন চাই না। তবে এই বিঝু ফুলটির দু’টি জাত লক্ষ্য করা গেছে। জাত দু’টির মধ্যে একটি হলো লিলি অপরটি হলো ভুঁইচাপা। তবে স্থানীয়রা জাত দু’টিকে বিজু ফুল হিসেবে আখ্যায়িত করে। কেননা পাহাড়ে চৈত্র-বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে ফুলগুলো ফোটে। ফুলগুলো ফুটলে পাহাড়িরা ধারণা করে তাদের বৈসাবি উৎসবের সময় হয়েছে। তাই তারা এটাকে সৌভাগ্য ফুল হিসেবে বিবেচেনা করে।
জেলা শহরের পাহাড়ি এলাকা ঝগড়া বিল গ্রামে গেলে দেখা মেলে এসব ফুলের। লিলি ফুলটি পাহাড়ি মাটির সঙ্গে মিশে ফুটে উঠে আর ভুঁইচাপা ফুলটি মাটির থেকে প্রায় এক ফুট লম্বা হয়ে ফোটে। এছাড়াও সরেজমিনে আঙুর ফুল এবং এক শ্রেণির পাহাড়ি রক্তাজবা ফুলের দেখা মেলে। এসব ফুলগুলো পাহাড়কে নতুন রূপ দিয়েছে। যে কেউ দেখলে চোখ আটকে যাওয়ার মতো। তবে স্থানীয়দের মধ্যে কথিত আছে, কেউ যদি আঘাতপ্রাপ্ত হয় তাহলে আঙ্গুর ফুলের পাতা আগুনে গরম করে আক্রান্ত স্থানে লাগালে ব্যাথা উপশম হয়। তবে এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা এই ফুলটির চাষ করে না। চৈত্র-বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি সময়ে ফুলগুলো ফুটে। পাহাড়সহ তাদের বাড়ির আঙ্গিানাকে আলাদা সৌন্দর্য দান করে। বিজুর মৌসুমে ফুলগুলো ফুটে বলে পাহাড়িদের কাছে বিজু হিসেবে বেশ পরিচিতি। তবে তাদের কাছেও ফুলটির জাত সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই।
ঝগড়া বিল এলাকার পাহাড়ি বাসিন্দা স্মৃতি মণি চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ছোটকালে দেখেছি পাহাড়ে বিজুফুলসহ নাম না জানা অসংখ্য ফুল ফুটতো। কিন্তু পাহাড়ে ঝুম চাষের কারণে ফুলগুলো তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। এখন পাহাড়ে ফুলের দেখামেলা ভার। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে জুম চাষ বন্ধ থাকায় পাহাড়ে আবারো বিভিন্ন ফুল ফুঁটতে শুরু করেছে। এর মধ্যে হারিয়ে যাওয়া ফুলের মধ্যে অন্যতম বিজুফুল।
একই এলাকার বাসিন্দা রবিলাল তঞ্চঙ্গ্যা বাংলানিউজকে বলেন, ফুল হলো সৌন্দর্যের প্রতীক, ভাগ্য-লক্ষীর প্রতীক। বেকার বসে আছি, কোনো কাজ নেই। করোনার কারণে পাহাড়ে জুম চাষ কমে যাওয়ায় পাহাড়ে তেমন যাওয়া হচ্ছে না। তবে এরমধ্যে পাহাড়ে নতুন নতুন ফুল ফুটতে শুরু করেছে দেখে নিজের কাছেও খুব ভাল লাগে।
ফুলপ্রেমী নুকু চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, সময়ের তালে পাহাড় তার আপন সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। কিন্তু করোনা মানুষের জন্য আর্শিবাদ হলেও প্রকৃতির জন্য আর্শিবাদ হিসেবে আগমন করেছে। পাহাড় আবারও তার আপন রূপ ফিরে পেতে শুরু করেছে। ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে পুরো পাহাড়।
নুকু আরও বলেন, ছোটকাল থেকে আমাদের মা-বাবাদের কাছ থেকে শুনে আসছি এগুলো বিজু ফুল। তবে তার কোনো বৈজ্ঞানিক নাম জানা নেই। এই ফুলগুলোকে পাহাড়িরা সৌভাগ্যর প্রতীক হিসেবে পরিগণিত করে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি অঞ্চলের উপ-পরিচালক প্রবণ কুমার চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, বৈশ্বিক করোনার প্রভাবে আপাতত ঝুম চাষ কম হওয়ায় পাহাড়ে বিভিন্ন ফুলের দেখা মেলে। তবে পাহাড়িরা ফুলগুলোকে বিজু ফুল বলে আখ্যায়িত করলেও এর দু’টি জাত আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। এরমধ্যে ভুঁইচাপা এবং লিলি অন্যতম। তবে ফুলগুলোর কোনো বৈজ্ঞানিক নাম তাদের জানা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২০
এনটি