নাটোর: নাটোরে ফসলি জমিতে অবৈধ পুকুর খননের মহোৎসবের পাশাপাশি এবার নদীর বাঁধের মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। বিশেষ করে চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলার কয়রাবাড়ি, শহরবাড়ি, কুশাবাড়ি, সেরকোল ও ডাহিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামের ফসলি জমি কেটে পুকুর খনন করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (০১ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিন জানা যায় এসব মাটির সিংহভাগ যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায় বিষয়টিতে কোনো প্রতিকার মিলছে না।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অভিযোগ জানালেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। উপরন্তু বেপরোয়া গতিতে এবং প্রকাশ্যে নারদ নদের বাঁধের মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে সিংড়া উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ সোমবার থেকে মাটি কাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড নারদ নদ তীরবর্তী ভূমি ১৯৭৬ এবং ১৯৮৩ অর্থ বছরে ভেদরা বিল পানি নিষ্কাসন প্রকল্পের’ আওতায় ২০১.১৬ একর জমি অধিগ্রহন করে। পরবর্তীতে পানি উন্নয়ন বোর্ড পোল্ডার-সি ও পোল্ডার-ডি প্রকল্পের অধীন নারদ নদ সংস্কারসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করে।
সম্প্রতি সিংড়া উপজেলার গুনাইঘাড়া এলাকায় নারদ নদ সংলগ্ন অধিগ্রহনকৃত জমি ও বাঁধ কেটে মাটি নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালীরা। ভেকু মেশিনের (এস্কেভেটর) সাহায্যে কাটা ওই মাটির সিংহভাগ বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাতাদের কাছেও বিক্রি করা হচ্ছে।
এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহ ধরে সিংড়া উপজেলার গুনাইখাড়া এলাকায় নারদ নদের বাঁধের মাটি কাটা হচ্ছে। প্রতিদিন ৩শ করে প্রায় ২১শ ট্রাক্টর মাটি কাটা হয়েছে। প্রতি ট্রাক্টর ৫শ থেকে হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
সিংড়া উপজেলার হাতিয়নদহ ইউনিয়নের গুনাইখাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. রায়হান হোসেন জানান, নারদ নদীর ধারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালীরা। এই মাটি কাটার সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিধিরা জড়িত থাকায় প্রতিবাদ করার সাহস করে না কেউ। সাতদিন ধরে আনুমানিক প্রতিদিন প্রায় তিনশ’ ট্রাক্টর করে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। এই মাটিগুলো বিভিন্ন ইটভাটা এবং গ্রামের আশপাশে বিক্রি করা হচ্ছে। ইটভাটায় ৪ থেকে ৫শ টাকা এবং গ্রামের ভেতরে ৮ শ থেকে ১ হাজার টাকায় এক ট্রাক্টর মাটি বিক্রি করা হচ্ছে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গড়ে এক ট্রাক্টর মাটি ৫শ টাকা দরে বিক্রি হলে ২১শ’ ট্রাক্টর মাটির দাম ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই মাটি সাত দিনেই বিক্রি করা হয়েছে। প্রতিদিন বিক্রি করা হচ্ছে তিনশ ট্রাক্টর মাটি। যার বর্তমান বাজার মূল্য ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৬০ দিনে প্রায় ৯০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেবে প্রভাবশালী মাটি খেকোরা।
নাটোর ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মিজানুর রহমান মিল্টন বাংলানিউজকে বলেন, নারদ নদের বাঁধের মাটি কোনো ইটভাটায় যাচ্ছে না। আর নারদের বাঁধ কাটার বিষয়টি আমাদের জানা নেই।
স্থানীয় বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান নদীর বাঁধের মাটি কেটে নেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সাহেবই ভাল বলবেন।
নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাকুর রহমান চঞ্চল বাংলানিউজকে বলেন, তিনি এখনও শপথ গ্রহণ করেননি। তবুও অবৈধভাবে নদীর বাঁধ কেটে মাটি বিক্রির বিষয় জানার পর তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে মৌখিকভাবে অবহিত করে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেছেন।
নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, তিনি বিষয়টি জানার পর এলাকায় সার্ভেয়ার পাঠিয়ে নদীর সীমানা নিধারণ করে লাল ঝাণ্ডা টানিয়ে দিয়ে মাটি কাটা বন্ধ করা হয়েছে।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এমএম সামিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, লোক মারফত খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্ভেয়ার পাঠিয়ে মাটি কাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসহ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২২
আরএ