সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের দাতিনাখালিতে নিজের কাঁকড়া খামারের পাশাপাশি এবার কুকুরের খামার গড়ে তুলেছেন ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম জুয়েল। এ কাজে তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন তার স্ত্রী ফিলিপাইনের নাগরিক আইভি ম্যানোলাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা।
কুকুরের খামার গড়ে তোলার পেছনে যেমন পশুপাখির প্রতি ভালোবাসাসহ ছোট্ট একটি গল্প লুকিয়ে আছে, তেমনি ছোট্ট একটি গল্প লুকিয়ে আছে আইভি ম্যানোলার সঙ্গে তার ঘর বাঁধারও।
ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম জুয়েলের সঙ্গে পেশায় ব্যাংকার আইভি ম্যানোলার পরিচয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে। প্রথমে পরিচয়, পরে ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা। যার চূড়ান্ত পরিনয় বিয়ে এবং তারা বর্তমানে একসঙ্গে বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের দাতিনাখালিতে বসবাস করছেন।
২০১৫ সালে দাতিনাখালিতে অ্যাকোয়া ম্যাকস নামে একটি কাঁকড়ার খামার গড়ে তোলেন শহীদুল ইসলাম জুয়েল ও আইভি ম্যানোলা দম্পতি। একপর্যায়ে কাঁকড়া চাষের প্রশিক্ষণ নিতে থাইল্যান্ডে যান তারা। সেখানে একটি কুকুর দেখে খুব পছন্দ হয় জুয়েলের। কুকুরটি সাইবেরিয়ান হাস্কি জাতের বলে তাকে জানান আইভি ম্যানোলা। পরে থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে পোষার জন্য সাইবেরিয়ান হাস্কি জাতের একটি কুকুর কেনেন জুয়েল। কিন্তু ঠিকমত পরিচর্যা করতে না পারায় শীতপ্রধান দেশের কুকুরটি ১৬ দিন পর মারা যায়। এরপর স্ত্রীর সঙ্গে ফিলিপাইনে গিয়ে পোষার জন্য একটি সাইবেরিয়ান হাস্কি জাতের মদ্দা (পুরুষ) কুকুর কিনে আনেন জুয়েল। সেটিকে এক বছর লালন পালন করেন তিনি। এরই মধ্যে কুকুরকে পোষ মানানোসহ পরিচর্যার কৌশলও শিখে নেন তিনি। তখন কুকুরের খামার গড়ে তোলার শখ জাগে তার।
পরে একই প্রজাতির একটি মায়া (মেয়ে) কুকুর কেনেন জুয়েল। এর ছয় মাস পরেই পাঁচটি বাচ্চা জন্ম দেয় কুকুরটি। এর মধ্যে একটি মারা যায়। বাকি চারটির মধ্যে তিনটি অনলাইনে মার্কেটিং করে বিক্রি করে দেন জুয়েল। তারপর আবারও পাঁচটি বাচ্চা হয় সাইবেরিয়ান হাস্কি প্রজাতির ওই মায়া কুকুরের। এখন একে একে ১৫টি কুকুর রয়েছে তার খামারে। খামারটি আরও সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
শহীদুল ইসলাম জুয়েল বলেন, সাইবেরিয়ান হাস্কি প্রজাতির কুকুর দেখতে ভয়ংকর হলেও খুবই ফ্রেন্ডলি। তারা মানুষের সঙ্গে খেলতে পছন্দ করে কিন্তু কামড়ে দেয় না। এরা খুবই ইনভেস্টিগেটিভ। এই প্রজাতির একটি কুকুর বাইরে থেকে আনতে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু আমার খামার থেকে সাইবেরিয়ান হাস্কির বাচ্চা ৫০-৬০ হাজারে বিক্রি করছি। শীতপ্রধান দেশের হলেও বাংলাদেশে সাইবেরিয়ান হাস্কি প্রজাতির কুকুরের খামার করা সম্ভব।
তিনি বলেন, এটা অবাক করার মতো বিষয় যে, সুন্দরবনের গায়ে সাইবেরিয়ান হাস্কি পালনে সফলতা পাওয়া গেছে। এখানে মোটামুটি সবসময় ৩০-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে। আমার খামারে বর্তমানে ১৫টি কুকুর রয়েছে, যাদের পেছনে মাসে ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ। প্রথমে ৯৯ শতাংশ মানুষ বলতো, বাংলাদেশে সাইবেরিয়ান হাস্কির খামার করা সম্ভব হবে না। কিন্তু এই ধারণা সঠিক নয়, এটার বাণিজ্যিক খামারেও যেমন সফলতা পাওয়া সম্ভব, তেমনি বাড়িতেও পালন করা সম্ভব। আমরা যেগুলো বিক্রি করেছি, প্রত্যেক জায়গা থেকেই ভালো ফিডব্যাক পাচ্ছি।
আইভি ম্যানোলা বলেন, আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে উপকূলীয় এলাকায় এ ধরনের ফার্ম গড়ে তোলা খুব কষ্টের ব্যাপার। তার ওপর আবার এখানে পশুর চিকিৎসার জন্য তেমন কোনো ভাল ব্যবস্থা নেই। তারপরেও এখানে সাইবেরিয়ান হাস্কির পরীক্ষামূলক খামারে আমরা সফল হয়েছি। এখন আমরা বলতে পারি এটা বাংলাদেশের সর্বত্র সম্ভব। যদিও প্রথমে আমাদের খুব কষ্ট হয়েছে, কারণ এখানে প্রয়োজনীয় টিকা পাওয়া যেত না। ঢাকা থেকে সংগ্রহ করতে হতো। এখন খুলনায়ও সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। এ জাতীয় খামার সবাই করতে পারেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২
আরএ