বাগেরহাট: বাগেরহাটের ঐতিহ্যবাহী আধ্যাত্মিক পীর মুসলিম শাসক খানজাহান আলীর (রহ) মাজার সংলগ্ন দীঘির কুমির “পিলপিল” আবারও ডিম দিয়েছে। মাজারের পূর্ব ঘাটে বিনা ফকিরের বাড়ি সংলগ্ন পাড়ে গর্তের মধ্যে ডিম দিয়েছে কুমিরটি।
ডিমগুলো ফোটানোর তা দিচ্ছে মা কুমিরটি। তবে এই ডিমে বাচ্চা ফোটা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। কারণ বিগত দিনে কয়েকবার ডিম পারলেও এই কুমিরের কোনো বাচ্চা ফোটেনি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় মাস খানেক আগে কুমিরটি বিনার ঘাট সংলগ্ন পাড়ে ডিম পেড়ে তা দিতে বসেছে। তবে বিষয়টি কয়েকদিন আগে জানতে পেরেছে মাজারের ফকিররা। এবার মা কুমিরটি দীঘির পূর্ব পাড়ে গর্ত খুঁড়ে ৭০টির মতো ডিম পেড়েছে। ওই ডিম ধুলামাটি দিয়ে ঢেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য এখন ‘তা’ দিচ্ছে কুমিরটি। মাঝে মধ্যে খুব অল্প সময়ের জন্য কুমিরটি দীঘিতে নেমে আবার ফিরে আসছে ডিমে ‘তা’ দিতে। ডিম পাড়ার খবরে দর্শনার্থীও বেড়েছে মাজারে। দর্শনার্থী কেউ কাছে গেলেই তেড়ে আসছে কুমিরটি। কুমিরটির অবস্থানের আশপাশ বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে মাজারের খাদেমরা।
কুমির দেখতে আসা ঢাকার কামরাঙ্গীচর এলাকার জান্নাতুল ফেরদাউস মম বলেন, ছোটবেলা থেকে বাগেরহাটের খানজাহান আলীর (রহ) মাজার ও দীঘির গল্প শুনেছি। দীঘির কুমির দেখার খুব শখ ছিল আমার। আজ স্বচোক্ষে দেখলাম, খুব ভালো লাগছে। তবে কুমিরের ডিমগুলো দেখতে পারলে আরও ভালো লাগত।
ইব্রাহিম ইসলাম নামের আরেক দর্শনার্থী বলেন, মাজারে অনেকবার এসেছি। কিন্তু কুমিরের দেখা মেলেনি। ডিম পাড়ার সুবাদে আজ কুমিরটিকে দেখলাম। খুশি হয়েছি। আমার সঙ্গে যারা রয়েছে তারাও খুশি হয়েছে।
বিনা ফকির বলেন, আমার বাড়ির পাশে কুমিরটি ডিম পেড়েছে। এবার মনে হয় ৫০ থেকে ৬০টি ডিম দিয়েছে, তিন মাস এখানে থাকবে। ডাঙ্গায়ই খাবার দিতে হয়। মুরগির গোশ পিস পিস করে দেই, তাই ও খায়। পানিতে ওর কোনো খাবার নেই। তবে এত কষ্ট করে কুমিরটি ডিমে তা দেয় কিন্তু এ ডিম থেকে কোনো বাচ্চা ফুটে বের হয় না। এটার জন্য আমার খারাপ লাগে।
বিনা আরও বলেন, মা কুমিরটি যখন এখানে এসে ডিম পাড়ে পুরুষ কুমিরটিও তখন ওর কাছাকাছি থাকে। তবে কখনও মাটির উপরে আসে না দীঘিতেই থাকে।
খানজাহান আলীর (রহ.) মাজারের প্রধান খাদেম শের আলী ফকির বলেন, খানজাহান আলী (রহ) দীঘির পানি রক্ষার জন্য কুমির লালন পালন করতেন। ৬শ বছরের বেশি সময় ধরে খানাজাহান আলী (রহ) লালনকৃত কুমিরের বংশধর এই দীঘিতে বেঁচে ছিল। কিন্তু সেই কুমিরগুলো এখন আর বেঁচে নেই। মাদ্রাজ থেকে আনা এই কুমিরটি কয়েক বছর ধরে ডিম পাড়লেও তাতে বাচ্চা ফুটছে না। কুমিরের বংশবৃদ্ধি না হলে দীঘিটি তার সাড়ে ৬শ বছরের ঐতিহ্য হারাবে। তাই দীঘিতে কুমিরের বংশবৃদ্ধি ও সংরক্ষণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান প্রধান খাদেম।
হযরত খানজাহান আলীর (রহ.) আমল থেকে প্রায় সাড়ে ৬শ বছর ধরে মাজারের দীঘিতে ‘কালা পাহাড়’ ও ‘ধলা পাহাড়’ নামের মিঠা পানির কুমির (মার্স ক্রোকোডাইল) বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসছে। তবে খানজাহানের আমলের কুমিরের শেষ বংশধরটিও মারা যায়। পরে ২০০৫ সালে ভারতের মাদ্রাজ ক্রোকোডাইল ফার্ম থেকে মিঠা পানির ছয়টি কুমির খানজাহানের দীঘিতে ছাড়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, মে ০২, ২০২২
আরএ