ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

১৩৭ বছরেও খুলনার অক্ষুণ্ণ ঐতিহ্য ইন্দ্রমোহনের রসগোল্লা

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৩
১৩৭ বছরেও খুলনার অক্ষুণ্ণ ঐতিহ্য ইন্দ্রমোহনের রসগোল্লা রসগোল্লা।

খুলনা: ভোজনবিলাসী বাঙালির কাছে মিষ্টি যেন এক অমৃত স্বাদের খাবার। মিষ্টির নাম শুনলেই জিভে পানি আসে না এমন মানুষ মেলা ভার।

আর সেটি যদি হয় খুলনার বিখ্যাত ইন্দ্রমোহন সুইটসের রসগোল্লা।  তাহলে তো কথাই নেই। এখানকার পাঁচ ধরনের সুস্বাদু ও লোভনীয় মিষ্টির জুড়ি মেলা ভার।

এটি খুলনার অন্যতম একটি ঐতিহ্যবাহী দোকান। যেখানে বংশ পরম্পরায় ১৩৭ বছর ধরে কলার পাতায় পরিবেশেন করা হয় মিষ্টি। যারা মিষ্টি তেমন পছন্দ করেন না, তারাও অনায়াসে খেয়ে ফেলতে পারবেন একাধিক মিষ্টি। খাঁটি দুধের তৈরি স্বাদ ও মানে অতুলনীয় ইন্দ্রমোহনের মিষ্টি- এমন মন্তব্য ক্রেতাদেরও।

খুলনা শহরে বেড়াতে গেলে অনেকই ঢুঁ মারেন এ  মিষ্টির দোকানে। বাংলাদেশে নিযুক্ত পাঁচ দেশের রাষ্ট্রদূতও ইন্দ্রমোহনের মিষ্টির স্বাদ নিয়েছেন।

মহানগরের বড় বাজারের ১৭ নম্বর হেলাতলা রোডের এ মিষ্টির দোকানের প্রতিষ্ঠাতা ইন্দ্রমোহন দে।

১৯৭২ সালে ৯৩ বছর বয়স পর্যন্ত আমৃত্যু দোকানটি নিজেই পরিচালনা করেন তিনি। এরপর তার ছেলে বেনীমাধব দে দোকানের হাল ধরেন। তারপর তার ছেলে সঞ্জয় দে দোকানের দায়িত্ব নেন।

১৮৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত ইন্দ্রমোহন সুইটস দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে বংশপরস্পরায়। ১৩৭ বছর পার হয়ে গেলেও এ দোকানের মিষ্টির স্বাদ এখনও আগের মতোই রয়েছে। যে কারণে খুলনাঞ্চলের মিষ্টির জগতে ঐতিহ্য ও সুনামের শীর্ষে রয়েছে এ দোকানের মিষ্টি। তবে দোকানটিতে নেই কোনো আধুনিকতার ছোঁয়া।

প্রতিদিন আশপাশের এলাকার খামারিদের কাছ থেকে গরুর খাঁটি দুধ সংগ্রহ করে সেখান থেকে ছানা তৈরি করা হয়। গরুর খাঁটি দুধ থেকে পাওয়া ছানা দিয়ে রসগোল্লা, পানতুয়া ও সন্দেশ বানানো হয়।

সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে সরেজমিনে ঐহিত্যবাহী মিষ্টির দোকান ইন্দ্রমোহনে গিয়ে দেখা গেছে, ক্রেতাদের ভিড় লেগে আছে।

বগুড়া থেকে খুলনায় বেড়াতে আসা ইমান উদ্দিন বলেন, খুলনায় বেড়াতে আসছি ইন্দ্রমোহনের মিষ্টি না খেলে কি হয়। কেননা এ মিষ্টির অনেক সুনাম শুনেছি। আজ নিজে স্বাদ নিলাম। সত্যিই অসাধরণ।

ময়লাপোতা এলাকার বাসিন্দা ইদ্রিস আলী বাংলানিউজকে বলেন, ১৩৭ বছরের পুরনো ঐতিহ্যমণ্ডিত ইন্দ্রমোহনের মিষ্টি বড়বাজারে এসে খাবো না এমনটি হতে পারে না। এর স্বাদ এত লোভনীয় যে একটা খেলে আর একটি খেতে মন চায়।

ইন্দ্রমোহন সুইটসের পরিচালক সঞ্জয় দে বাংলানিউজকে বলেন, পানতোয়া, রসগোল্লা, সন্দেশ, চমচম ও দানাদার এই পাঁচ ধরনের মিষ্টি তৈরি করা হয় আমাদের দোকানে। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে একইভাবে মিষ্টি তৈরি করা হয়। এই কারণে স্বাদ ও গুণেমানে এখনও অনন্য ইন্দ্রমোহনের সুইটস।

তিনি আরও বলেন, অতুলনীয় স্বাদের কারণে ২০১৯ সালের (১২ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার সদলবলে খুলনা সফরে এসে চেখে দেখেছেন এ দোকানের রসগোল্লা ও পানতোয়া। শুধু দোকানে বসে খাওয়া নয়, এই মিষ্টি তাকে এতটাই মুগ্ধ করেছে যে রসগোল্লা ও পানতোয়া কিনে সঙ্গে নিয়েও গেছেন তিনি। মিলারের সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রীও। তিনিও এই মিষ্টির প্রশংসা করেছেন খুব।

কারিগর ও বিক্রেতা কমল সরকার বাংলানিউজকে বলেন, খাঁটি দুধ দিয়ে তৈরি হওয়ায় আমাদের মিষ্টির চাহিদা বেশি। ক্রেতারা দোকানে এসে মিষ্টি খান আবার নিয়েও যান। এছাড়া খুলনার যেকোনো বড় অনুষ্ঠানে ইন্দ্রমোহনের মিষ্টির রয়েছে বিশেষ চাহিদা।

তিনি আরও বলেন,  সন্দেশ এক কেজি ৫শ টাকা, রসগোল্লা বড় প্রতি পিস ২০ টাকা , রসগোল্লা ছোট প্রতি পিস ১০ টাকা, পানতোয়া বড় পিস ২০ টাকা, পানতোয়া ছোট পিস ১০ টাকা, দানাদার ও চমচম প্রতি পিস ১০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। এখানকার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, সেই প্রথম থেকেই কলার পাতায় মিষ্টি পরিবেশন করা হয়। খাওয়ার জন্য কোনো চামচ দেওয়া হয় না। কলার পাতায় করে হাত দিয়েই মিষ্টি খেতে হয়। মলিকের সেই ঐতিহ্য এখনও ধরে রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৩
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।