“লাল মজলুম” ক্রাউড ফান্ডিংয়ে নির্মিত একটি রাজপথ-গণপরিবেশনা। “লাল মজলুম” একদিকে শিক্ষার্থী-শ্রমিক জনতার জুলাই অভ্যুত্থানের রক্তাক্ত স্মৃতি যেমন রোমন্থন করে পুনঃসৃজন করে, তেমনি এই জনপদে ইতিহাসের বিভিন্ন বাঁকে সংঘঠিত গণঅভ্যুত্থানকেও একসূত্রে গ্রথিত করে।
জনগণের রাজনৈতিক আত্মত্যাগের স্মৃতি ভুলে যাওয়ার বিরুদ্ধে এক অবিরত সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তাকে জনপরিসরে (পাবলিক স্পেসে) শিল্পরূপ দিতে “লাল মজলুম” একটি গেরিলা প্রচেষ্টারূপে গণ্য হতে পারে। ঔপনিবেশিক আধুনিকতাবাদী প্রতাপশালী চিন্তা “সেকুলারিজম” ধারণার বিপরীতে, এই গণপরিবেশনা “ইনক্লুসিভিটি” ধারণাকে আত্মস্থ করতে প্রয়াসী।
সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিবাদ, ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিবাদ, এমনকি ব্যক্তির ক্ষুদ্রতম পরিসরে থাকা মাইক্রোফ্যাসিবাদকেও এই পরিবেশনা প্রশ্ন করে। এবং অন্তর্ভুক্তিমূলকতার ধারণা প্রয়োগ করে “লাল মজলুম” মনে করিয়ে দেয় যে, সহিষ্ণুতা, সহাবস্থান, সংখ্যালঘুত্ব এবং অপরের সাথে সংযোগ ও সংশ্লেষ ঘটলেই কেবল আমাদের জীবন অর্থবহ হয়ে উঠতে পারে।
এই নান্দনিক-রাজনৈতিক লক্ষ্যে, এই পরিবেশনায় ওরস সংস্কৃতির গান, অভ্যুত্থানের মিছিল, রাষ্ট্রীয় ও সংকীর্ণ সেক্টারিয়ান সন্ত্রাস, নজরুলের “বিদ্রোহী” কবিতার বিভিন্ন আঞ্চলিক বাংলা ও চাকমা ভাষায় গণরূপায়ণ, রবীন্দ্র-নজরুল কাব্যের রাপ সংগীতায়ন, নারী ও প্রকৃতির বহু রূপ অন্বেষণ করা হবে। এই গণপরিবেশনায় যে কোনো প্রকার ক্ষমতাকেই ক্রিটিক করার নৈতিক সৌন্দর্য এবং মজলুমের কথা বলার রাজনৈতিক পরিসরকে কল্পনা করার ভাষা প্রভৃতি আত্মস্থ করে একটি হাইব্রিড শিল্পভাষ্য নির্মাণের প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।
রাস্তায় সংঘটিত মিছিল ও গণপরিসরে উপস্থাপিত বিভিন্ন শিল্পকর্ম যেমন পথনাটক, পোস্টারনাটক, ইনস্টলেশন ও পারফরম্যান্স আর্টের ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছে এই উন্মুক্ত নাট্য পরিবেশনায়। লিখিত সাহিত্য ব্যবহার করা হলেও তাৎক্ষণিক উদ্ভাবন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শরীর, সময় ও স্থানের সম্পর্কের ভিত্তিতে এই পরিবেশনার অ্যাকশন, ডায়লগ ও স্পেস ডিজাইন করা হয়েছে। এই গণপরিবেশনার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এর “হ্যাপেনিং” স্বভাব। অর্থাৎ যখন এটি ১৬ নভেম্বর, শনিবার বিকেল ৪টায় রাজু ভাস্কর্য থেকে শাহবাগ পর্যন্ত স্থানে স্থানে সংঘটিত হবে সেদিনই কেবল এই পরিবেশনার পূর্ণাঙ্গ রূপ গঠিত হবে। তাই অনেকাংশেই “লাল মজলুম” কোনো পূর্বনির্ধারিত নাট্যিক পরিবেশনা নয়। বরং স্থান-স্থাপত্য-চলমানতা ও দর্শকের সংযোগে পূর্ণ হবে “লাল মজলুম”।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে খণ্ড খণ্ড দৃশ্যে চলমান এই পরিবেশনাটি শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে একটি গণ-অধিবেশনমূলক সংলাপের দৃশ্যায়নের মাধ্যমে শেষ হবে।
বর্তমানের রাজনৈতিক-সামাজিক জটিল সংকটগুলিকেও একটি বহুত্ববোধক সাংস্কৃতিক শিল্পভাষার প্রয়োগে তুলে ধরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহমান মৈশান-এর ভাবনা, পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় “লাল মজলুম” আগামী ১৬ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে রোজ শনিবার বেলা ৪টা থেকে রাজু ভাস্কর্যে শুরু হবে। বেলা ৫টায় শাহবাগ মোড়ে শেষ হবে।
এই পরিবেশনায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গণতন্ত্রকামী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের শিল্পী ও সংগঠকবৃন্দ অভিনয়সহ বিভিন্ন স্তরে অংশ নিয়েছেন। এই ব্যতিক্রমী এপিকধর্মী রাজপথ-গণপরিবেশনা বস্তুত কল্পনা ও সৃজনশীলতা নির্ভর সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে, কর্তৃত্ববাদের বিপরীতে, বাংলাদেশের নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্ত সংক্রান্ত নিপীড়িতের বাসনাকে নান্দনিক-সাংস্কৃতিক বয়ান আকারে নির্মাণের প্রচেষ্টা চালাতে চায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২৪
এমজেএফ