ঢাকা: তেজগাঁও রেলগেট এলাকায় রাস্তার পাশে ছোট্ট মাংসের দোকান দিয়ে ব্যবসা করছিলেন মোহাম্মদ বরকত আলী (৫৫) (ছদ্মনাম)।
চার বছর আগে অভিযানের দোকান ভেঙে দেয় সিটি করপোরেশন।
আর এভাবেই সংসার চালানোর মাঝেই বরকত আলীর মেয়ে আজ অ্যাডভোকেট হয়েছে। ছেলেদের ইঞ্জিনিয়ার বানানোর ইচ্ছা তার।
এই স্বপ্ন নিয়েই ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাংস বিক্রি করে যাচ্ছেন বরকত নিয়মিত।
সৎ পথে উপার্জন করে যাচ্ছেন, এমনকি তার মাংস বিক্রির দোকানও নাই।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচে নির্মাণাধীন কাজের রডের সঙ্গে মাংস ঝুলিয়ে বিক্রি করছেন বরকত। আবার ভ্যানের হ্যান্ডেলে ঝুলিয়ে রেখেও মাংস বিক্রি করছেন তিনি ।
এ মাংসবিক্রেতা বাংলানিউজকে বলেন, ৩০ বছর যাবত এই এলাকার ব্যবসা করে আসছি। দোকান ভেঙে দেওয়ার পরও আমি থেমে থাকিনি। আমার কোনো দোকান নাই। এভাবেই মাংস বেচি। কষ্ট তো হচ্ছেই। তবে উপায় নাই, কারণ সংসারে আয় করার আর কোন ব্যবস্থা নাই। আলহামদুলিল্লাহ, এই মাংস বেচেই মেয়েরে অ্যাডভোকেট বানিয়েছি।
তবে আর কষ্ট করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাংস বিক্রি কেন?
জবাবে তিনি বললেন, মেয়ের পড়াশোনা শেষ কিন্তু ছেলে দুইজন আছে। তাদের মানুষ করতে হবে যতদিন আল্লাহতায়ালা আমাকে সুস্থ রাখেন এভাবেই সৎ পথে ইনকাম করে যাব। এর মধ্যেই আল্লাহ বরকত দেবেন তাতে আমি খুশি।
কীভাবে চলছে এই ভ্রাম্যমাণ ব্যবসা?
বরকত আলী বললেন, আমার খুব সামান্য পুঁজি। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট থেকে সকালে গোস্ত এনে এলাকায় বিক্রি করি। আমাকে আগের থেকে এখন একটু বেশি কষ্ট করতে হচ্ছে, কারণ দোকান নাই। এই ভ্যানগাড়ি ৮০ টাকা ভাড়া করে অত্র এলাকায় ঘুরে ঘুরে পরিচিতদের মাঝে এবং ছোটখাটো হোটেলগুলোতে গোস্ত দিয়ে আল্লাহর রহমতে এখনো টিকে আছি। পাঁচ জনের সংসার আমার। এই ব্যবসা করেই জীবনটা পরিচালিত হচ্ছে। হাজারীবাগ এলাকাতে ভাড়া বাসায় থাকি। সবমিলে আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। তবে আগের মতো বেচাকেনা নাই কারণ মাংসের দাম বেশি। তবু হাল ছাড়ি নাই, বাকি জীবন এভাবেই চালিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।
ছেলেদের নিয়ে কি স্বপ্ন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছেলেরা বাবা-মায়ের পরিপূর্ণ বাধ্য থাকে না। তারপরও দেখি ইচ্ছা আছে, বড় ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াব। আল্লাহ ভরসা।
গোস্ত কিনতে আসা মোহাম্মদ জহির (৪৫) বাংলানিউজকে বলেন, গত ১৮ বছর যাবত আমার সঙ্গে পরিচিত তিনি। একজন ভালো মানুষ। আমাদের কখনও ঠকাননি, সব সময় ভালো মাংস দেওয়ার চেষ্টা করেন ক্রেতাদের। অনেক পরিশ্রম করে সংসার চালান তিনি। দোকান না থাকার পরও উনি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। মেয়েকে অ্যাডভোকেট বানিয়েছেন। ছেলেদেরও নিয়ে অনেক স্বপ্ন তার। আমরা সবাই তার সার্বিক মঙ্গল কামনা করি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩
জিএমএম/এসএএইচ